শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট, ২৮ ফেব্রুয়ারি \
২৪ জেলায় ২৯টি সাইলো নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ৩ বছর অতিবাহিত হলে এখনো হাতীবান্ধায় কাজই শুরু হয়নি। তবে, দুইদিন আগে প্রকল্প কর্মকর্তা শীদুল ইসলাম জেলার হাতীবান্ধায় সাইলো নির্মাণের জায়গা পরিদর্শন করে গেছে। ২০২১ সালের ৮ জুন দেশের ২৪ জেলায় ২৯টি সাইলো নির্মাণের কাজের এক হাজার ৪০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অর্থ একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০২১ হতে ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।
জানা গেছে, দেশে ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক আধুনিক সুবিধাদি নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত ধান সংরক্ষণের সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে করে সারা দেশে ১.৫০ লাখ মেঃটন ধান শস্য সংরক্ষণ ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দেশে এখনো পর্যন্ত কোন ধান সংরক্ষণের সাইলো নেই। কৃষকের কাছে ধান সংগ্রহ করে মিল মালিকদের দিয়ে চাল করে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি চালু রয়েছে। ধানের সাইলো নিমার্ণের পাইলট প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৮ জুন। এই প্রকল্পে প্রথমে ২৯টি সাইলো নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। দেশব্যাপী কৃষকের কাছে সরাসরি ধান কেনার লক্ষ্য নিয়ে এই সব সাইলো নির্মাণের প্রকল্পটি খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে ছিল । এতে প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার ৪০০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ধরা হয়। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ( ৫ বছরের মধ্যে) বাবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। রহস্যজনক কারণে জেলার হাতীবান্ধা এলএসডি গোডাউন চত্বরে ৫০০০ মেঃটন ধারণ ক্ষমতার সাইলো নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি।
গত রবিবার ২৩ ফেব্রæয়ারি সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের এফপিএমইউ ইউনিটের ডিজি শহীদুল আলম ( প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা) জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার এলএসডি গোডাউন চত্বর পরিদর্শন করেন। এতেই জনসাধারণের নজরে আসে সাইলো নির্মাণের প্রকল্পটি। অথচ ২০২১ সালের ৮ জুন মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করে ছিলেন। কৃষকের কাছে সরাসরি ধান কিনে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল। যাতে ধান কিনে স্থানীয় ভাবে সংরক্ষণ করা যায়। এতে করে সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আধুনিক এসব সাইলোতে সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন ঘটতো, সেই সাথে কীটনাশক বিহীন মজুদ ব্যবস্থা গড়রে উঠবে। মজুদকৃত খাদ্য শস্যের দুই – তিন বছর পুষ্টিমান বজায় থাকতো। আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মজুদ শস্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ও কৃষকের ন্যায়্যমূল্য নিশ্চিত করা প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। যেসব জায়গায় সাইলো নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। স্থান গুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, টাঙ্গাইল সদর, ফরিদপুর সদর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের মেলান্দহ, শেরপুরের শ্রীবর্দী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নোয়াখালী সদর, কুমিল্লা সদর, দিনাজপুর সদর ও বিরল, ঠাকুরগাঁও সদর, পঞ্চগড়ের বোদা, লালমনিরহাটের হাতিবান্দা, নওগাঁর শিবপুর, রানীনগর, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর ও নন্দীগ্রাম, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, সিলেটের কানাইঘাট, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, নড়াইল সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, পটুয়াখালী সদর ও কলাপাড়া এবং ভোলার চরফ্যাশন। নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া সাইলোতে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ধান ঝাড়াই, বাছাই, শুকানো, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি থাকবে। প্রতিটি এলাকায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ২৯টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা হবে।
এসব সাইলোতে ট্রাক ও বাল্ক ওজন যন্ত্র, কনভেয়িং ও বাকেট এলিভেটর সিস্টেম সংযোজন থাকবে। সাইলোর সিভিল ফাউন্ডেশন, মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন সহ ২৯টি কেন্দ্রে সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করা হবে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে সাইলো গুলোতে। উত্তরাঞ্চল ও দেশে ধানের সাইলো নির্মাণ এবারে প্রথম গ্রহন করা হয়েছে। উত্তরের জেলায় ধানের সাইলো নির্মাণে উত্তরের মানুষের আপদকালীন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সাধারণত দুর্ভিক্ষের কবলে দেশ বা কোন অঞ্চল পড়লে অন্য স্থানে খাদ্য শস্য দ্রæত পরিবহনে ঝুঁকি তৈরি হয়। জনসাধারণের তোপের মুখে পড়তে হতে পারে। এতে একধরনের অজানা ঝুঁকি তৈরি হয়। ধানের সাইলো নির্মাণ স্থানীয় পর্যায়ে বা উত্তরাঞ্চলের জেলায় হওয়ায় সেই ঝুঁকি মুক্ত হবে। উত্তরাঞ্চলে খাদ্য শস্য মজুদ নিশ্চিত হবে। লালমনিরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক দিন আগে প্রকল্প কর্মকর্তা সাইলো নিমার্ণ প্রকল্পের জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন। এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি অবশ্য এই জন্য করোনাকালীন পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। করোনাকালীন মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেয়ার চ্যালেন্স ছিল সরকারের ও খাদ্য বিভাগের। সেই চ্যালেন্স সুন্দরভারে সরকার ও খাদ্য বিভাগ মোকাবিলা করতে পেরেছে। এদিকে সরকারের খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইডটি এখনো আপডেট করা হয়নি। সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক বদলি হয়ে এখন শিল্পমন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন কিন্তু এখনো তার নাম প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছে। সরকার তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জবাদিহিমূলক রাষ্ট্রগঠন করতে উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু রহস্যজনক কারণে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সকল দপ্তরের ওয়েব সাইড গুলো আপডেট নেই।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ফেব্রুয়ারী ২৮,২০২৪//