অপরিপক্ক আমে কেমিক্যাল মিশিয়ে পাকা বলে বাজারজাত করা হয়
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে আমের জগতে গত কয়েকবছর ধরে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আম সংগ্রহের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তা পাড়া শুরু করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। থেমে নেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্র কাননের আম পাড়াও।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্র কাননের ১ হাজার ১’শ টি আম গাছের আম অপরিপক্ক হলেও তা পেড়ে বাজারজাত অব্যাহত রেখেছেন ইজারাদার মেহেরপুর শহরের মাইনুল ইসলাম।
গত বুধবার (২৬ এপ্রিল), বেলা ১২ টার দিকে মুজিবনগর আম্র কাননে এমন দৃশ্যই চোখে মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে আম্রকানন থেকে আম বিক্রির অভিযোগ আসলেও সময় অভাবে যেতে না পেরে বুধবার সরেজমিনে দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল, দৈনিক দেশতথ্য, দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ ও দৈনিক শিকলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন মুজিবনগর আম্রকাননে।
ইজারাদার মাইনুল ইসলামের উপস্থিতিতেই মেহেরপুর তহবাজারের একজন ব্যবসায়ী, গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর ও বামুন্দীসহ কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যস্ত ছিলেন আমপাড়ায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েকটি দলে ৩৫ ক্যারেট আম পাড়ার কথা থাকলে সরেজমিনে একটি স্থানে ৯ ক্যারেট আম পাওয়া যায়।
অপরিপক্ক আমপাড়া নিষিদ্ধ এবং জেলা প্রশাসনের দেওয়া সময়ে আম পাড়ার নিয়ম থাকলেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আম কেন পাড়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে, ইজারাদার প্রথমে কোন সদুত্তর না দিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ফোন করতে থাকেন।
পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি অপরিপক্ক আম অনুমতিবিহীন পাড়া যাবেনা। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ে পাড়তে হবে বলে জানান। একইসাথে তিনি নতুন এসেছেন এব্যাপারে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনে ফোন করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রণী খাতুনের সাথে যোগাযোগের কথা জানান।
অবশেষে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রণী খাতুনকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান। এসময় ইজারাদার ও আম ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কথা শুনে দ্রুত মোটরসাইকেল ও আলগামন নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
ইজারাদার মাইনুল ইসলাম জানান, অপরিপক্ক আম পাড়ায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিলেও এসব আম টক ও কাঁচা হিসেবে আচার তৈরিতে বাজারজাত করা হচ্ছে। তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিতে যাচ্ছেন বলেও এসময় জানান।
ততক্ষণে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাগান ইজারা নেওয়া মাইনুলকে ডেকে পাঠান এবং অপরিপক্ক আম না পাড়ার জন্য নির্দেশনা দেন। একইসাথে যেসব আম পাড়া হয়েছে তা কাঁচা আম হিসেবেই বাজারজাত করার জন্য বলেন এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আম না পাড়ার জন্য নির্দেশনা দেন।
এসময় অপরিপক্ক আম পেড়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে তা পাকা আম হিসেবে বাজারজাত না করে সেজন্য সাংবাদিকদের সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মেহেরপুরের আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে। সুতরাং এসব অপরিপক্ক আম পেড়ে তা কেমিক্যাল মিশিয়ে পাকিয়ে মেহেরপুরের আম হিসেবে বাজারজাত করলে বদনাম হবে। দেশে মেহেরপুরের আমের চাহিদাও কমে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সে ক্ষেত্রে অপরিপক্ক আম না পাড়ার জন্য তিনারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ২৯,২০২৩//

Discussion about this post