খুলনার ফুলতলা এম এম কলেজের ছাত্র সৈয়দ আলিফ রোহানকে খুন করার সাথে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম শান্ত ও শেখ আবু হাসনাতকে সংগঠন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। খুন হয়ে যাওয়া রোহানের নামে একটি একাডেমিক ভবনের নাম করনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ ম্যানেজিং কমিটি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দিনে দুপুরে ফুলতলা এম এম কলেজ ক্যাম্পাসে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্র সৈয়দ আলিফ রোহানকে। নিহতের পিতা সৈয়দ আবু তাহের টুটুল বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪ কে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ফুলতলা থানার ওসি (তদন্ত) এস এম শাহাদাত হোসেন। তিনি এজাহার নামীয় ৪ নং আসামি দীপ্ত সাহাকে আটক করেন।
পুলিশ জানায় দীপ্তসাহা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেষ্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সেই জবানবন্দীতে সে বলেছে, এক সপ্তাহ পূর্বে পায়গ্রামকসবা গ্রামের একটি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান হয়। সেখানে হাসিবুল ইসলাম শান্ত, তাছিন মোড়ল, শেখ আবু হাসনাত, ছাব্বির ফারাজিসহ কয়েকজন মেয়েদের ছবি তুলে উত্যক্ত করে। এতে রোহান ও তার বন্ধুরা বাধা দেয়। সেই কারণে রোহানকে খুন করা হয়।

প্রকাশ্য দিবালোকে এমন লোমহর্ষক ঘটনার চারদিনেও আর কোন আসামি আটক না হওয়ায় সোমবার রাতে মামলাটি খুলনার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির খুলনার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, কেস ডকেট গতরাতে হাতে পেয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছি। এজাহারভূক্ত আসামি দীপ্ত সাহা থানা পুলিশের হাতে আটক ও তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেখেছি। ঘটনায় জড়িত আসামিদের আটকের প্রচেষ্টা চলছে।
ফুলতলা এম এম কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ হাসিবুল ইসলাম শান্ত এবং ফুলতলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ আবু হাসনাত কলেজের ছাত্র রোহান কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। ফলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কলেজ শাখা ও ফুলতলা উপজেলা শাখা ইমেজ সংকটে পড়ে।
এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সভাপতি মইনুল ইসলাম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক এসকে সাদ্দাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ফুলতলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ আবু হাসনাতকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। ফুলতলা এম এম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জীম বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আক্তার স্বাক্ষরিত অনুরূপ বিবৃতিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ
হাসিবুল ইসলাম শান্তকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়।
একইসাথে তাদেরকে চূড়ান্ত বহিস্কারের জন্য খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর সুপারিশও করা হয়েছে।
সর্বশেষ এ ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাদিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে ফুলতলা এম এম কলেজের ম্যানেজিং কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্র মোঃ হাসিবুল ইসলাম শান্তকে কলেজ থেকে বহিস্কার, রোহানের নামে একাডেমিক ভবনের নামকরণ, কলেজ নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা
স্থাপন এবং রোহান হত্যা মামলা সংক্রান্ত পূর্ন সহযোগিতার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ আলহাজ¦ আনোয়ারুজ্জামান মোল্যা,বিএমএ সালাম, মোঃ সেলিম আহমেদ মহলদার, সহকারী অধ্যাপক ফিরোজা আক্তার, ফুটলাল দত্ত, লুৎফর রহমান, এম এম মোনায়েম হোসেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//৫ এপ্রিল,২০২২//

Discussion about this post