Print Date & Time : 24 August 2025 Sunday 11:00 pm

মেলান্দহে মেলার মাঠে মাদকের ছড়াছড়ি

বিপথগামী উঠতি বয়সী তরুণরা

প্রতিবছরের ন্যায় জামালপুরের মেলান্দহে এবারও চলছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। দীর্ঘদিন থেকেই উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় হযরত শাহ কামাল (র) এর মাজার-কে কেন্দ্র করে চলে আসছে এ মেলা।

মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজানোয় শব্দ দুষণের শিকার হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অসুস্থ ব্যক্তি ও শিশুরা।পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও মেলার মাঠে পাগলদের বসানো প্রতিটি ডেরায় চলছে মাদক সেবন ও সেবনের সরঞ্জামাদি বিক্রি। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। 

এদিকে মেলা উপলক্ষে খোলা ট্রাক, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও নছিমন গাড়িতে গাদাগাদি করে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে উদ্দ্যম নৃত্যে উঠতি বয়সি তরুণরা পাড়া দাপিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে মেলাস্থলে। এতে অতিষ্ঠ পরীক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এসব বন্ধের বিষয়ে সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন কর্তৃপক্ষের। 

গত ১৪এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় নানা ধরনের আয়োজনের পাশাপাশি চলছে নেশার আড্ডা এটি কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে বাজছে নানা ধরনের গান। ফলে এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী, শিশু,অসুস্থরা সহ স্থানীয়দের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। 

জানা গেছে, মেলায় বিভিন্ন পণ্যের কয়েক-শ স্টল রয়েছে। প্রতিট স্টলের জন্য মেলা কমিটিকে দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ৩০হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে মেলায় বানিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে চলছে সার্কাস, চরকি ও নানান গানের আসর। 

স্থানীয়রা জানান, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে মেলা চালানো কোনো মতেই ঠিক হচ্ছেনা। মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। মাদকের নেশায় পড়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মেলার আয়োজক কমিটি অর্থ আয়ের জন্য পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে পরীক্ষার মধ্যেই মেলা চালু রেখেছেন, যা নিন্দনীয়। দ্রুত মেলা বন্ধ করলে পরিক্ষার্থী সহ স্থানীয়দের উপকার হবে। 

স্থানীয় এসএসসি পরিক্ষার্থীরা জানান, মেলায় দিনে-রাতে প্রায় সময়ই উচ্চ শব্দে মাইকে বা ডেকসেটে বাজানো হচ্ছে গান-বাজনা। মেলায় আগত দর্শনার্থী ও যানবাহনের হর্নের শব্দে আমাদের পড়ালেখা করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। এসব শব্দ আমাদের কানে এসে লাগে। মনোযোগ সহকারে পড়তে পারি না। যানবাহন ও লোকজনের ভীড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া খুবই কস্টকর হয়ে যায় বলে জানান তারা।

পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, যেভাবে উচ্চ শব্দে মাইক বা ডেকসেট বাজানো হচ্ছে এতে করে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় এ দাবি জানিয়েছে তারা। 

এ বিষয়ে মেলার সার্বিক বিষয় দেখভাল করা দুরমুঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরী মুঠোফোনে জানান, মাজার মেলায় আগত পাগলেরা মাদক খায় এটা দীর্ঘদিন থেকেই চলছে। পাগলেরা মাদক খায় সারা বাংলাদেশ জানে এটা সর্বজনীন স্বীকৃত ওপেন সিক্রেট বিষয়। এটা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে আমরাও থাকি। তবে তরুন শিক্ষার্থীরা যাতে এর সাথে জড়িত না হতে পারে এজন্য আমরা চেস্টা করছি। আর উচ্চ শদ্বে গান বাজানোয় চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটায় প্রশাসনের নির্দেশে গতকাল (৬ এপ্রিল) মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার সাধ্যমতে মাদক নির্মুলের চেস্টা চালাচ্ছি। কয়েকবার মেলায় অভিযান চালিয়েছি। এসময়ে আমাদের চোখে এমন কিছু পড়েনি। আবার গিয়ে যদি দেখতে পায় তাহলে ব্যবস্থা নিব। 

এ নিয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি এই প্রথম জানলাম। মেলার পারমিশন কে দিছে জানিনা। আমার কাছ থেকে কেউ পারমিশন নেয়নি। তবে আমি বিষয়টি জানলাম দেখবো। 

এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, ইতিমধ্যেই মেলায় যাতে উচ্চ শব্দে গান না বাজে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত সময়ে সরেজমিনে গিয়ে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ০৭,২০২৩//