চেয়ারম্যান বলছেন, তার ইউনিয়নে গৃহহীন কেউ নেই!
মেহেরপুর প্রতিনিধি : কোনটা সত্য? চেয়ারম্যান না গৃহহীন দম্পতি?
কলাপাতা, পাটকাঠি ও পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঘর বানিয়ে সেউটিয়া নদীর পাশের শ্মশান ঘাটে বাস করেন গৃহহীন সিরাজ দম্পতি । দিনের আলো শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলেই চলে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই ।
এই পরিস্থিতির শিকার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কচুইখালী জুগিন্দা গ্রামে সিরাজুল বিশ্বাস ও নার্গিস দম্পতি।
একদিকে সন্ত্রাসীদের ভয়। অন্য দিকে পেয়ে বসেছে হঠাৎ বৃষ্টি । তাদের নেই মাথা গোজার ঠাই।
জানা গেছে , মাথা গোজা ঠাই মিলেও কাটেনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। বাড়ির চারি পাসে ধুধু মাঠ আর মাঠ সারা রাতেই কাটে নিরঘুম কখন যেন নেমে আসে কাল রাত্রি এমনটাই বলছিলেন এই দম্পত্তি । নিজের জাইগা জমি না থাকাই পরের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন ।তবে সেটাও শেষ রক্ষা হয়নি। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে কখনো ঢাকা, আবার কখনো ফরিদপুর এভাবেই কাজের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন সিরাজুর ইসলাম। গেল তিন বছর আগে নিজ এলাকায় এসে শুরু করেন বাদাম, পেয়ারা ও ভাঙ্গারির ব্যবসা। কিন্তু তাদের নেই মাথা গোজার ঠাই। তাই অন্যের বাড়িতে প্রতি মাসে দুহাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতে শুরু করেন তারা। ১৫ দিন আগে বাড়িওয়ালা ভাড়া বৃদ্ধি করার নামে কৌশল করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে জমি জায়গা না থাকায় শ্মশান ঘাটে বসবাস শুরু করেন ।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলাপাতা,পাটকাঠি ও পলিথিনের ছাদ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ঝুপড়ি ঘর। হালকা বৃষ্টিতেই ভিজে যাচ্ছে ঘরে থাকা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। ছোট্র একটি টম দোকানে চা বিস্কুট বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। জমি জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্মশান পাড়েই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
সিরাজুর ইসলাম জানান,অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ফরিদপুরে কাজের সন্ধানে গেছি। বর্তমানে নিজ এলাকায় এসে অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাদাম, পেয়ারা ও ভাঙ্গারির ব্যবসা করছি। প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকি। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে কৌশলে বাড়ির মালিক, বাড়ি থেকে বের করে দেন। বাবা—মায়ের জমি জায়গা না থাকায় নিজেদের ভিটিতে চার ভাইয়েরও জায়গা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এই শ্মশান ঘাটে ঘর বেধে আছি।
সিরাজুলের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, সারা দিন খাটাখাটনি করে রাত্রে একটু ঘুমাবো তারও উপায় নেয়। একজন ঘুমারে আরেক জনকে জেগে থাকতে হয়। সারা রাতেই কাটে দূরচিন্তাই কখন যানি শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলি । এই নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি । তবে শুনেছি অনেকেই সরকার ঘরদেয় তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন আমাদেরকে একটু ভালোভাবে বেছে থাকার জন্য সরকার একটা ঘর দেয় তাহলে আমাদের খুব উপকার হবে।
এলাকাবাসিরা জানান, সিরাজুল বিশ্বাস যেখানে বসবাস করছেন এটি শ্মশান ঘাট। সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। যারা চলাচল করে তাদের ছিনতাইকারীদের সাথে যুদ্ধ করে চলাচল করতে হয়। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে সিরাজুল বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ।গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, আমার ইউনিয়নে যদি কোন ভূমিহীন ব্যক্তি বসবাস করে থাকে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি ঘর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাংলাদেশের কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। তারই অংশ হিসেবে মেহেরপুর জেলা ও গাংনী উপজেলায় একক গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং গাংনী উপজেলাকে ভূমিহীন ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন হিসেবে থাকে তাদেরকে সরকারি ঘর দেয়া হবে ।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৬ জুলাই ২০২৪