মাহাবুল ইসলাম, গাংনী, মেহেরপুর: জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল এমনই একটি ফল যার কোন অংশই কিন্তু ফেলে দেবার নয়। ভিতরের সু-স্বাদু রসালো অংশ আমরা খেয়ে থাকি। পরে আঠি কিংবা বিচি সেটাও চিংড়ি কিংবা অন্য মাছের সাথে রান্নায় দারুণ। উপরের সবুজ কাঁটাযুক্ত খোসা গবাদিপশুদের খাবার, ভিতরের ভোঁতা যেটিকে বলা হয় সেটিও তাদের খাবার। কাঁঠাল পরিপক্বের পূর্বে তরকারি হিসেবে রান্না করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের পাতা ছাগলের খাদ্য, গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে কাঁঠালের বেশ কদর রয়েছে এবং বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। যা শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়াসহ এশিয়ার প্রতিটা দেশে।
দেশে কাঁঠাল চাষের কথা বলতে গেলে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়াতে অসংখ্য কাঁঠালের গাছ রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক, মহাসড়কের দু’পাশে, বাড়ির পিছনের বাগানে, পুকুরের পাড়ে, মাঠে, বাড়ির আঙ্গিনাসহ সকল স্থানে কাঁঠাল গাছের দেখা মিলবে। আর বিগত বছরগুলোর ন্যায় চলতি বছরেও প্রতিটা গাছে দৃশ্যমান হয়েছে অর্ধশতাধিক কাঁঠাল। এমন কিছু গাছ নজরে পড়েছে যেগুলোতে শতাধিক কাঁঠাল ঝুলতে দেখা গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে মেহেরপুরের পিরোজপুর, আশরাফপুর, টেংরামারী, কাঁঠালপোতা, বুড়িপোতা, কুলবাড়ীয়া, শোলমারী, কাথুলী, কালিগাংনী, নওপাড়া, হিজলবাড়ীয়া, বাদিয়াপাড়া, হেমায়েতপুর, বামুন্দী, দেবীপুর, হাড়াভাঙ্গা, কাজীপুর, সহড়াতলা, গোপালনগর, ধানখোলা, গাঁড়াডোব, আমঝুপি খোকসা, জুগিন্দা, চিৎলা, ইসলামনগর, কেদারগঞ্জ, বাগোয়ানসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে প্রচুর কাঁঠাল গাছ চোখে মেলে। যেসব গাছে অসংখ্য কাঁঠাল ঝুলছে। এমন কিছু গাছে নজরে পড়ে যেগুলোতে শতাধিক কাঁঠাল রয়েছে। কোন কোন গাছের কাঁঠাল উজ্জল সবুজ, কোনটার আবার কালচে সবুজ। কোন গাছের কাঁঠাল বেশ বড়সড়, কোনটাই আবার ছোট সাইজের। কোন কোন গাছের গোড়া থেকে মগডাল পর্যন্ত শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠালই নজরে পড়বে। দেখে মনে হবে যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যা দেখে আপনার মন ভরে যাবে।
ইতিমধ্যে কিছু হাটবাজারে কাঁচা কাঁঠাল বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাগান থেকে প্রতি পিস কাঁঠাল ১’শ ২০ টাকা থেকে ১’শ ৩০ টাকায় কিনে তা বাজারে কেঁটে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বেচা-কেনা করছেন।
আর কিছুদিন পর হয়তো পাকা কাঁঠালের স্বাদ পাওয়া যাবে। গরমে পাকা কাঁঠালের সাথে গমের রুটিও সেই। মেহেরপুরে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে কাঁঠালের মৌসুমে প্রতিদিন কাঁচা কাঁঠালের তরকারি কিংবা পাকা কাঁঠালের সাথে গমের রুটি কিংবা সকালে পান্তা ভাত খেয়ে থাকেন।
কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা জানান, হাট-বাজারগুলোতে কাঁচা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। মাস খানেক পরেই হয়ত পাঁকা কাঁঠালও উঠতে শুরু করবে। অনেকেই আছেন প্রতি বছরই প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেন। দুই থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁঠালের ফলনও ভালো হয়েছে। তাই ভরা মৌসুমে অনেক কম দামে কাঁঠাল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৯’শ হেক্টর কাঁঠাল বাগান রয়েছে। মেহেরপুরের চাহিদা পূরণ করে এসব কাঁঠাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

Discussion about this post