স্থাবর অস্থাবর সম্পদ কুক্ষিগত করে অবশেষে জন্মদাত্রী আশি শতাব্দি বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে পাষণ্ড
সন্তান তাদের স্ত্রীরা। অসহায় বৃদ্ধের ঠাঁই মিলেছে রাস্তায়। ঘটনাটি ূসঘটেছে শনিবার সকালে মেহেরপুরের গাংনীর কল্যাণপুর গ্রামের উত্তর পাড়ায়। কেউ এগিয়ে আসেনি বৃদ্ধাকে রক্ষায়। তবে প্রতিবেশিরা প্রতিবাদ না করলে বৃদ্ধার প্রতি সন্তানদের অমানবিক অত্যাচারের বিস্তর বর্ণনা দেন। সেই সাথে একটি বাড়িতে আশ্রয় দেন। তবে পুলিশ বলছে, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনী শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীর নাম কল্যাণপুর। গ্রামের মৃত খেলাফত মণ্ডলের স্ত্রী এই বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন। বয়স আশির উর্ধে¦। সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ৫ মেয়ে। সকলেই স্বাবলম্বী। স্বামি গত হয়েছেন ২৩ বছর আগে। সন্তানদের বড় করে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। আশা ছিল সন্তানেরা বৃদ্ধ বয়সে কামাই করে খাওয়াবে আর মৃত্যুর সময় সৃষ্টিকর্তার নামটি কানে দিবে। কিন্তু না, তা হয়নি।
হতভাগা মায়ের জিবনে নেমে এসেছে সুখের বদলে দুঃখের ঘনঘটা। পাষণ্ড সন্তানেরা কৌশলে ৫ বোনকে ফাঁকি দিয়ে স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি লিখে নেয়। এর পর থেকে নির্মম নির্যাতন শুরু করেন সন্তান ও তাদের স্ত্রীরা। সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মেয়েরাও খোঁজ নেন না মায়ের। অবশেষে দুমুঠো ভাত না দিয়ে বাক প্রতিবন্ধী মাকে ফেলে গেছে রাস্তায়। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে আর্তনাদ করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে রক্ষায়।
প্রতিবেশি বাবলু জানান, মায়ের ভরন পোষন ও ভাত দেয়ার বিষয়ে তিন ভায়ের মধ্যে সমঝোতা হয়। ১০ দিন করে একেক সন্তান মাকে খাওয়াবে ও যত্ন নিবে। অথচ কেউ সঠিকভাবে তা করেন না। যার কাছেই যাক নির্যাতন করে সেই। বর্তমানে মেজ ছেলের কাছে রয়েছেন মা সাহেরা। কিন্তু সন্তান ও স্ত্রী রুপিয়া খাতুন মা সাহেরাকে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় ফেলে যায়।
একই কথা জানালেন, আহসান হাবিব বাচ্চু। প্রতিবেশি সাজিয়া খাতুন জানান, সন্তানদের কারো কোন অভাব নেই সংসারে। বৃদ্ধ মহিলাটা এমনিতেই প্রতিবন্ধী। আর কয়দিন ইবা বাঁচবে ? অথচ তাকে দুমুঠো ভাত না দিয়ে করা হচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। প্রতি নিয়ত ওই পরিবারের লোকজন মারধর করে।
সাহেরা খাতুনের দেবর হারেজ আলী জানান, সাহেরা খাতুনের স্বামী মারা যাবার সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে যান স্ত্রীকে তার দাফন কাফনের জন্য। হারেজ আলীসহ কয়েকজন ওই টাকা স্থানীয় কাউছার মেম্বরের কাছে জমা রাখা হয়। কিন্তু সেই টাকারও হদিস নেই। আবার বয়স্কভাতা প্রাপ্ত টাকা গুলোও সন্তানেরা ভাগ করে নিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধা সাহেরা খাতুনের কোন ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা কোন কথা বলতে চান নি।
এদিকে ৪০ হাজার টাকা গচ্ছিত রাখার ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বর কাউছার মেম্বরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করলে ব্যবস্থা
নেয়া হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৮ জুলাই ২০২৩

Discussion about this post