Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 6:00 pm

মেহেরপুর পাগলী ও সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা একটি পরিবার

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে সদ্যজান সন্তান  ও তার মা পাগলীকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পেড়েছে কৃষক মহাসিন আলী ও তার পরিবারের লোকজন। একদিকে সদ্যজাত শিশুটির খাবারে অপ্রতুলতা, অন্যদিকে পাগলীর অত্যাচার। সবমিলিয়ে গোটা পরিবার এক অথৈয় সমুদ্রে পড়েছে।

সন্তান ও সংসার কি তা বোঝে না ভবঘুরে ছদ্মনাম পাগলী  জোসনা। এমনকি কেউ জানেনা তার পরিচয়। অথচ মাস খানেক আগেই পাগলীটি মা হয়েছে। ফুটফুটে কণ্যাটির নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা। সন্তান প্রসবের পরই দূর ধুরান্ত থেকে আগত লোকজন কেউ জানাতে পারেনি পাগলীটির পরিচয়। সে সময় অনেকেই যতসামান্য টাকা পয়সা দিয়ে যাই অসহায় পরিবারটিকে। আবারও অনেকেই আগ্রহী হয় সন্তানটিকে দত্তক নেওয়িার। কিন্তু সে সময় গৃহকর্তা মহানিস আলী ও তার পরিবারের লোকজন সন্তানটিকে দত্তক দিতে চাননি। তারা ভেবেছিলেন হয়তো পারগলীটির পরিচয় পাওয়া যাবে। কিন্তু  প্রায় এক মাস যাবৎ পাগলীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এদিকে পাগলী ও তার সন্তানের খাবারের ব্যবস্থা  করার দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

গৃহকর্তা মহসিন আলী জানান, মাসখানেক আগে রাস্তায় ঘুরছিলো পাগলিটি। ছেলেমেয়রা উত্যক্ত করছিলো তাকে। বিষয়টি দেখে পাগলীকে আমার মেয়ে তাকে আমার  বাড়িতে নিয়ে আসে। শারিরিক গঠন দেখে সন্তান সম্ভবা বুঝতে পেরে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যায় । সেখানে পরিক্ষা নিরিক্ষা করার পর অন্তঃস্বত্মার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। গত (১২ অক্টেবর) ওই পাগলী ফুটফেটে সন্তান জন্ম দেয়।

গৃহকর্তা মহসিন আলীর মেয়ে পপি খাতুন জানান, আমি আর ভাইয়ের মেয়ে দোকানে গিয়েছিলাম। ওখানেই পাগলীকে দেখতে পাই পাগলী ভাত ভাত খাচ্ছিল আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পাগলিকে ঢিল মারছিল। তা দেখে আমার মায়া লাগে তাই আমি তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। 

গৃহকর্তা মহসিন আলীর স্ত্রী জানান,প্রথম দিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য  পাগলীর কাছে দিলে  তার বুকের দুধ খাওয়াতো। কয়েক দিন হচ্ছে বাচ্চাটিকে আর সহ্য করতে পারছে না। কখনো হাত টানাটানি আবার পা ধরে উঁচু করে ধরে রাখছে পাগলী। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি পাগলীকে নিয়ে কখন না বাচ্চাটিকে   মেরে ফেলে। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়। ইতোমধ্যেই সমাজ সেবা অফিসার ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন বলেও জানান তিনি। 

বাউনন্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল জয়নাল, আমি বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক পাগলী ও শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলাম। সমাজসেবা অফিসার ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সাথে আমার কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি মা ও শিশুর জন্য কিছু একটা করার জন্য। 

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থান পরিদর্শন করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রসাশক মহোদয়কে জানানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাগলীগে আদালতের মাধ্যমে ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে।

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ৬ নভেম্বর  ২০২৩