সাতক্ষীরার তালায় স্বামীর বাড়িতে মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করায় শ্বশুর কর্তৃক শাশুড়ীকে পিটিয়ে ও নিজ মেয়েকে জিম্মি করে মা-মেয়েকে তালাকনামায় স্বাক্ষর আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে তালা উপজেলার হাতবাশ এলাকায়।
অভিযোগে জানানো হয়, গত ২০০২ সালের ২১ জুলাই খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির নাছিরপুর গ্রামের জব্বার গাজীর মেয়ে নাদিরা আক্তার লিপিকার বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলার সোনাটিকারী গ্রামের মৃত মুজাম্মেল হাওলাদারের ছেলে ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর হাওলাদারের সাথে।
বিয়ের পর তাদের দাম্পত্যজীবনে দু’ মেয়ের জন্ম হয়। যার একজন সুমাইয়া সুলতানা মিম কালীগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এর আগে সুমাইয়াকে তার পিতা জাহাঙ্গীর তালা উপজেলার হাতবাশ এলাকার শামছুর সরদারের ছেলে আনোয়ার হোসেন জাহিদের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে দিয়ে দেয়।
সেখানে তাদের জীবনে শুরুতেই নানা কারণে-অকারণে কলহ শুরু হয়। সর্বশেষ জাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা সুমাইয়াকে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে সুমাইয়ার মা নাদিরা তার পিতা জব্বার গাজীকে সাথে নিয়ে হাতবাশ গ্রামে তার মেয়ের বাড়িতে যায়।
এর আগে জাহিদ তার শ্বশুর জাহাঙ্গীরকে পক্ষে নিয়ে মোবাইলে শাশুড়ীর তার বাড়িতে আসার বিষয়টি জানিয়ে দেয়। পরে নাদিরা মেয়ের বাড়িতে পৌছানো মাত্রই সকলের সামনে জামাইয়ের উষ্কানিতে তার স্বামী জাহাঙ্গীর তাকে দেম মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেয়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীর নিজ মেয়ে সুমাইয়াকে সাথে নিয়ে স্ত্রী ও তার পিতা জব্বার গাজীকে জামাইয়ের বাড়িতে ফেলে রেখে সাতক্ষীরায় ভাড়া বাড়িতে চলে যায়।
এরপর রাতেই নাদিরা তার পিতার সাথে নাছিুপুরস্থ পিত্রালয়ে চলে আসে। পরের দিন ১৬ অক্টোবর সকালে স্বামী জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জের সোনাটিকারীতে চলে যায়। এর পরের দিন জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী নাদিরাকে মেয়ের বিষয়ে ফয়সালা না করে বাড়িতে যাওয়ায় নিজ হেফাজতে থাকা মেয়ে সুমাইয়াকে হত্যার হুমকি দিয়ে সাতক্ষীরার ভাড়া বাড়িতে যেতে বলে। পরের দিন ১৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা ভাড়া বাড়িতে গেলে মেয়ে সুমাইয়াকে জিম্মি করে মা নাদিরার কাছ থেকে একটি তালাকনামায় স্বাক্ষর নেয়। এছাড়া এসময় তারা মেয়ে সুমাইয়াকেও অপর একটি তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে সেখান থেকে তাদের বের করে দেয়।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের গাড়ি চালক। কালীগঞ্জের নলতায় প্রথম স্ত্রী-সনতানদের রেখে পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সাতক্ষীরা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
সর্বশেষ নাদিয়া আক্তার মিম শারীরিক ও মানষিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে মেয়ে সুমাইয়াসহ একসঙ্গে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পাইকগাছার কপিলমুনির নাছিরপুরস্থ পিত্রালয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছেন।
শুক্রবার সকালে নারী নির্যাতনের লোমহর্ষক এমন খবরে নাদিয়ার পিতার বাড়িতে গেলে তারা মা-মেয়ে নারী নির্যাতনের এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন।
এসময় মা নাদিয়া অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের বাড়িতে জামাইয়ের উষ্কানিতে স্বামী কর্তৃক পৈশাচিক নির্যাতন ও পরে মেয়েকে জিম্মি করে তাদের মা-মেয়েকে তালাকনামায় জোর-পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি ও তার মেয়ে এঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মিম জানায়, স্বামীর বাড়িতে নিগৃহীত হয়ে যখন পিতা-মাতার আশ্রয়ে শান্তনা খোঁজার কথা, ঠিক তখনই নিজ পিতা কর্তৃক মাসহ তালাকপ্রাপ্ত হয়ে তারা এখন মানষিকভাবে মরে কোন রকম বেঁচে রয়েছেন। মায়ের পাশাপাশি তিনিও লোমহর্ষক এ পৈশাচিক ঘটনার বিচার দাবি করেন। এব্যাপারে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জা//দৈনিক দেশতথ্য// ২১ অক্টোবর ২০২২//

Discussion about this post