আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালে। এর আগে পাঁচটি রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনকে বলা হচ্ছিল সেমি-ফাইনাল, আর দু’বছর পর যে সাধারণ নির্বাচন হবে সেটা হবে ফাইনাল।
তাহলে কি পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চারটিতে জিতে ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)?
গতকাল এই নির্বাচনের ফল আসার পর সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে দলীয় কর্মীদের সামনে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফলের পর কিছু রাজনৈতিক পণ্ডিত বলেছিলেন, ২০১৯-এর জয়ে কী আছে, তা তো ২০১৭ সালেই ঠিক করা হয়েছিল। কারণ, ২০১৭ সালে ইউপির ফল এসেছিল। আমি জানি, এবারও এই জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলবেন যে, ২০২২ সালের ফলাফল ২০২৪ সালের ফলাফল নির্ধারণ করেছে।
প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সভাপতি তথা মোদি সমর্থক সূর্য প্রকাশ মনে করছেন, ২০২৪ সালে এই নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব দেখা যাবে। তার মতে, ওই নির্বাচনে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতি দেখে আমার মনে হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচন বিজেপির জন্য কোনো সমস্যা হবে না। দেশজুড়ে মোদিপন্থী মনোভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে তাহলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির জন্য আমি কোনো সমস্যা দেখছি না।
তিনি বলেন, মানুষ এখনও মোদির নামে ভোট দেয় আর সামনে এটা বন্ধ করা আরও কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে জয় যে যেনতেন বিষয় নয়, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা যোগি আদিত্যনাথের জন্য যেমন বড় বিষয়, তেমনি অন্যান্য রাজ্যে মোদির জন্যও এর আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সীমা চিশতীর মতে, এই মুহূর্তে হিন্দুত্বের পক্ষেই পরিবেশ বিরাজ করছে। এ নির্বাচনের ফলাফলে বিরোধীদের পরাজয়ের চেয়ে ভোটারদের মানসিকতাই বেশি দৃশ্যমান হলো।
তিনি বলেন, নিজের মঙ্গলের পক্ষে ভোটার ভোট দিচ্ছে না, তার চাওয়া অন্য কিছু।
এভাবেই যদি চলে তাহলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে হিন্দুত্ব জিতবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি যদি বিজেপির কেউ হই, তাহলে বুঝব, এ ভোট হিন্দুত্বেই গেছে। এটা শুধু হিন্দি বেল্টের বিষয় নয়। বিভিন্ন রাজ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোদিকে আটকানো মুশকিল
প্রায় সব বিশ্লেষকই এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদিকে থামানোর ক্ষমতা এই মুহূর্তে বিরোধীদের নেই। নরেন্দ্র মোদির বয়স ৭০ বছর এবং তিনি পুরোপুরি সুস্থ। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি ছুটি নেন না, শুধুই কাজ করে যাচ্ছেন।
বোঝাই যাচ্ছে, ২০২৪-এর ফাইনাল ম্যাচে বিজেপির ক্যাপ্টেন হবেন মোদি এবং বিরোধীরা একজোট হলেও তাকে হারানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত আট বছর ধরে কংগ্রেসের পতনের কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। নতুন করে হারের পর ফের একবার তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত আট বছরে কংগ্রেস অনেক রাজ্যে হেরে গেলেও অনেক রাজ্যে জিতেছেও। ২০১৮ সালে, যখন দলটি ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটকে জয়লাভ করল, তখন অনেকের ধারণা ছিল যে, কংগ্রেস হংয়তো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে দলটি দুইবার নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।
সীমা চিশতীর কথায়, কংগ্রেস খুব বাজেভাবে হেরেছে। পাঞ্জাবেও হেরেছে বাজেভাবে, যার কারণে দেশে একটা দলেরই দাপট দেখা যাচ্ছে।
কেমন হবে ২০২৪ সালের নির্বাচন?
তাহলে কি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন বিজেপি বনাম কংগ্রেস হবে না? এটা কি বিজেপি বনাম আঞ্চলিক দলগুলোর নির্বাচন হবে?
বৃহস্পতিবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মনোহরলাল খট্টর বলেন, দেশে এখন মাত্র দুটি দল রয়েছে, বিজেপি ও কংগ্রেস। তিনি বলেন, আজও দেশের অধিকাংশ জায়গায় বিজেপি ও কংগ্রেস উপস্থিত রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের আদর্শের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে।
মহারাষ্ট্রে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা প্যাটেল আশাবাদী, ২০২৪-এর নির্বাচনে তার দল শক্তিশালীই থাকবে। তিনি বলেন, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও শক্তিশালী। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কঠিন লড়াই হবে।
সীমা চিশতীর মতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে কংগ্রেস কেমন ফল করবে, তার ওপরে।
তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে কী ধরনের ফলাফল হয় তার ওপর। আমাদের মূল্যায়ন পরিবর্তিত হয়। এখন দেখুন, বাংলার নির্বাচনের পরে, একরকম ছিল। সুতরাং কংগ্রেস যদি সত্যিই একজোট হয়ে রাজ্য স্তরে (কর্ণাটক ও গুজরাট নির্বাচনে) দৃঢ়ভাবে কাজ করে, তাহলে কংগ্রেস যদি বুঝতে পারে যে মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে আশা আছে। ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তাকে খুঁজে নিতে হবে।
তবে সূর্য প্রকাশ বলছেন, ২০২৪-এর নির্বাচনে ফাইনাল ম্যাচ হবে বিজেপি বনাম আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে।
প্রথমেই আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বিজেপি গত কয়েক বছর ধরে ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে রয়ে গেছে। এটা বেশ কয়েকটা আঞ্চলিক দলের একটি গোষ্ঠীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আজকের ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আঞ্চলিক দলগুলো অনেক রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে। রাজস্থান ও ছত্তীশগঢ়ের মতো রাজ্যে, কংগ্রেস যেখানেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বিজেপিই সেখানে প্রধান বিরোধী দল এবং তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতায় আসে।
দ্বিতীয় পরিস্থিতি ওডিশার মতো রাজ্যে, যেখানে একটি স্থানীয় দল (বিজেডি) কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। বিজু জনতা দল কংগ্রেসকে পরাজিত করেছে। এখন বিজেডির প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। তেলেঙ্গানায়, যা কংগ্রেসের রাজ্য ছিল, নির্বাচনে কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে এখন বিজেপি আঞ্চলিক দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। একই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশেও।
তিনি বলছেন, পাঞ্জাবে কংগ্রেসের পক্ষে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসা কঠিন হবে। আপনি দিল্লির দিকে তাকান, যেখানে আম আদমি পার্টি পরপর দুবার বিধানসভায় কংগ্রেসকে পরাজিত করেছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post