বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বাজারে অসংখ্য ব্র্যান্ড, মডেল ও দামের ফোন থাকায় একটি ভালো ফোন বেছে নেওয়া বেশ কঠিন হতে পারে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি একটি ভালো ফোন কিনতে পারবেন এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারবেন।
বাজেট নির্ধারণ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট ঠিক করা। আপনার যদি বাজেট সীমিত থাকে, তাহলে হাই-এন্ড বা ফ্ল্যাগশিপ ফোনের দিকে না তাকিয়ে মিড-রেঞ্জ বা বাজেট ফোনের দিকে মনোযোগ দিন। এই ক্যাটাগরিতেও এখন অনেক ভালো পারফরম্যান্সের ফোন পাওয়া যায়। আপনার বাজেট যদি ১৫,০০০ টাকা হয়, তাহলে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে কী কী ফোন আছে তা দেখুন, কিন্তু ২৫,০০০ টাকার ফোন নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। যে কোন ধরনের স্মার্টফোন সম্পর্কে সহজেই জেনে নিতে পারবেন MobileDokan এর ওয়েবসাইট থেকে।
কোন কাজে ব্যবহার করবেন?
আপনি কী উদ্দেশ্যে ফোনটি ব্যবহার করবেন, তা ঠিক করে নিন। যদি আপনি শুধু কল করা, মেসেজিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিংয়ের জন্য ফোন চান, তাহলে কম বাজেটের সাধারণ ফোনই যথেষ্ট। গেমিংয়ের জন্য ফোন চান, তাহলে ভালো প্রসেসর (যেমন Snapdragon 8 Gen বা MediaTek Dimensity সিরিজের), উচ্চ রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে (৯০Hz বা তার বেশি) এবং ভালো কুলিং সিস্টেম আছে এমন ফোন বেছে নিন।
ফটোগ্রাফি যদি আপনার প্রধান উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ক্যামেরার মেগাপিক্সেল নয় বরং সেন্সর ও অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) আছে কিনা তা দেখে নিন।
ডিসপ্লে
মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে একটি বড় অংশ। ডিসপ্লেতে কী ধরনের প্যানেল ব্যবহৃত হয়েছে তা জানা জরুরি। AMOLED/OLED ডিসপ্লেতে রঙ অনেক উজ্জ্বল এবং কালো রঙ অনেক গভীর হয়। এগুলো সাধারণত ফ্ল্যাগশিপ এবং মিড-রেঞ্জ ফোনে থাকে। এগুলো ব্যাটারিও কম খরচ করে। IPS/LCD ডিসপ্লেগুলো সাধারণত বাজেট ফোনে ব্যবহৃত হয়। এগুলো AMOLED-এর মতো উজ্জ্বল না হলেও ভালো মানের হয়। ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট (refresh rate) দেখুন। গেমিং ও স্মুথ স্ক্রলিংয়ের জন্য ৯০Hz বা ১২০Hz রিফ্রেশ রেট ভালো।
প্রসেসর ও র্যাম (RAM)
ফোনের পারফরম্যান্স মূলত প্রসেসর এবং র্যামের ওপর নির্ভর করে।
প্রসেসর: একটি শক্তিশালী প্রসেসর ফোনকে দ্রুত কাজ করতে এবং অ্যাপস চালাতে সাহায্য করে। কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন (Snapdragon) বা মিডিয়াটেকের ডাইমেনসিটি (Dimensity) সিরিজের প্রসেসরগুলো বেশ জনপ্রিয়।
র্যাম (RAM): র্যাম যত বেশি হবে, ফোন তত দ্রুত মাল্টিটাস্কিং করতে পারবে। ৪জিবি র্যাম দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু গেমিং বা ভারী কাজের জন্য ৬জিবি বা ৮জিবি র্যাম নেওয়া ভালো।
ক্যামেরা
অনেকেই শুধু মেগাপিক্সেল দেখে ক্যামেরা বিচার করেন, যা একটি ভুল ধারণা। ক্যামেরার মান নির্ভর করে সেন্সর, অ্যাপারচার (aperture), লেন্স এবং সফটওয়্যারের ওপর। বড় সেন্সর ভালো ছবি তুলতে পারে। ছোট অ্যাপারচার (যেমন f/1.8) কম আলোতেও ভালো ছবি তুলতে সাহায্য করে। এটি ভিডিও রেকর্ড করার সময় বা কম আলোতে ছবি তোলার সময় ছবি স্থির রাখতে সাহায্য করে।
ব্যাটারি ও চার্জিং
ফোনের ব্যাটারি লাইফ আপনার ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ৫০০০ mAh ব্যাটারির ফোন সারাদিন চলে। ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকলে ফোন দ্রুত চার্জ করা যায়, যা সময় বাঁচায়।
স্টোরেজ
প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন, ছবি এবং ভিডিও সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজ থাকা জরুরি। ১২৮জিবি স্টোরেজ বেশিরভাগ মানুষের জন্য যথেষ্ট। যদি আপনার আরও বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন হয়, তাহলে ২৫৬জিবি বা ৫১২জিবি স্টোরেজ অপশন দেখুন। মেমোরি কার্ড দিয়ে স্টোরেজ বাড়ানো যায় কিনা, তাও দেখে নেওয়া উচিত।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
ফোনের ডিজাইন ও তৈরির মানও গুরুত্বপূর্ণ। গ্লাস বা মেটাল বডির ফোনগুলো সাধারণত মজবুত হয়। এছাড়াও, ফোনটি হাতে ধরে ব্যবহার করতে আরামদায়ক কিনা তা যাচাই করুন।
সফটওয়্যার ও আপডেট
ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (Android বা iOS) এবং সফটওয়্যার আপডেট কেমন, তা জেনে নিন। নিয়মিত আপডেট পেলে ফোনটি সুরক্ষিত থাকে এবং নতুন ফিচার উপভোগ করা যায়।
ওয়ারেন্টি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবা। মোবাইলটি অফিশিয়াল বা আনঅফিশিয়াল, তা জেনে নিন। অফিশিয়াল ফোনগুলোতে সাধারণত এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে এবং সার্ভিসিং সুবিধা পাওয়া যায়। আনঅফিশিয়াল ফোনে দাম কম হলেও ওয়ারেন্টি বা সার্ভিসিং সুবিধা নাও পেতে পারেন, যা পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
উপসংহার
একটি স্মার্টফোন কেনার আগে তাড়াহুড়ো না করে কিছুটা সময় নিয়ে গবেষণা করুন। অনলাইনে বিভিন্ন ফোরাম ও রিভিউ দেখে নিজের জন্য সেরা ফোনটি বেছে নিন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ফোনটি বেছে নিতে পারলে আপনি সেরা অভিজ্ঞতা পাবেন এবং আপনার খরচও সার্থক হবে।