অতি ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ৪৩টি ইউনিয়নের তিনশোটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। পাশাপাশি পাহাড়ধ্বসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে একজন নিহত ও বড়লেথা সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামের একজন আহত হয়েছেন। কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ সাব স্টেশন ইতিমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
রোববার (২০ জুন) মৌলভীবাজারের বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এ তথ্য জানান।
মনু, ধলাইসহ বেশ কিছু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার ৭ টি উপজেলা- বড়লেখা, জুড়ী, সদর, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
কুলাউড়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর- ৭টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে । কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এই উপজেলার ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৫০০জন।
রাজনগর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙ্গে ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মৌলভীবাজার জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
গতকাল (২০জুন) রাতে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০৮৬১-৫২৭২৫। সদর উপজেলার ১নং খলিলপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত শেরপুর, ব্রাক্ষণগ্রাম, হামরকোনা, দাউদপুর, চানপুর, লামুয়া, কাটারাইসহ কয়েকটি গ্রাম ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ (মহিলা আসন-৩৬) এবং মৌলভীবাজার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে সভাপতি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এমপি ।
রবিবার ২০ জুন দুপুরে সদর উপজেলার মনু নদীর বাঁধ সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান,পানি উন্নয়ন বোড নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান, মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৯ জুন-২০২২//