গোফরান পলাশ, কলাপাড়া: একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের মনোলোভা প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার খ্যাতি এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন
হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে কুয়াকাটায়। তবে বাস টার্নিমাল না থাকায়
পর্যটক বহনকারী যানবাহন সহ কুয়াকাটা রুটের বাস, মিনিবাস, দুরপাল্লার কোস
গুলোর যত্রতত্র পার্কিংয়ে ভোগান্তি বাড়ছে পর্যটকদের।
সূত্র জানায়, কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার দুইযুগ পর
কুয়াকাটা-পটুয়াখালী মহাসড়ক সংলগ্ন তুলাতলী নামক স্থানে ৬ একর জমির উপর
নির্মাণ কাজ শুরু হয় এই বাস টার্মিনালের। কাজ শুরু হওয়ায় যানজট মুক্ত হবে
কুয়াকাটা এই আশায় স্বস্তি বোধ করে পর্যটক সহ সাধারন মানুষ। কিন্তু গত
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনালটির
নির্মান কাজ শুরু হলেও এখনও বাকি প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ। ১৯ মাসেও বাস
টার্মিনালটির নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ ও দুর্ভোগ বাড়ছে স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে।
জানা যায়, কাজ শুরুর প্রথমদিকে বালু ভরাট, বাউন্ডারি দেয়াল, ড্রেণ নির্মানের কিছু অংশের কাজ দ্রুত গতিতে করা হয়। এরপরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এই জনগুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ডের নির্মান কাজ। যার ফলে কুয়াকাটায় আগত অসংখ্য পর্যটকবাহী ও কুয়াকাটা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা
শত-শত গাড়ির যত্রতত্র পার্কিংয়ে ভোগান্তি বাড়ছে পর্যটকদের। যানজট কমাতে পৌর কর্তৃপক্ষ অস্থায়ীভাবে রাস্তার পাশে খোলা মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করায় সাময়িক যানজট মুক্ত হলেও ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছেনা।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দুটি প্যাকেজে এই কাজ নির্মাণের দায়িত্ব পায় পটুয়াখালীর মেসার্স গিয়াস উদ্দিন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার প্রথম প্যাকেজের বালু ভরাটের কাজ শেষ হলেও দেয়াল নির্মানের বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি। আর দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতাধীন ড্রেনের কিছু কাজ ও বিল্ডিং এর
বেইজ, কলমের কাজ শেষ হলেও ছাদসহ উপরিভাগের সকল কাজ এখনও বাকি।
সূত্রটি আরও জানায়, এই কাজের প্রথম মেয়াদ শেষ হয় ২২ সালের জুন মাসে। পরেদ্বিতীয় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২৩ সালের জুন পর্যন্ত। মেয়াদ বাড়ানোর ৭-৮ মাসপার হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিতে
থাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছেগাফেলতি নয় বাসস্ট্যান্ড সংক্রান্ত সমস্যার জন্যই কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে কুয়াকাটা আসা পর্যটক নীলিমা হামিদ বলেন, কুয়াকাটায় আমরা বেড়াতে এসেছি। এখানে আরকিছু না হোক একটা বাস স্ট্যান্ডতো থাকবে। সড়কে দু’পাশে শতশত যানবাহন থাকায় আমাদের ২ কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুর্ভোগ না কমলে কুয়াকাটায় আর আসবো না।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে আগের থেকে কয়েকগুণ পর্যটক বাড়ছে।
যার ফলে যানজটে নাকাল থাকে কুয়াকাটা। আর বাসস্ট্যান্ডের কাজ শুরু হলেও কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারনে এখন কাজের ধীরগতি। কুয়াকাটার জন্য এই বাসস্ট্যান্ড অতি প্রয়োজনীয়। যদি দ্রুত এর সমাধান করা না হয় তাহলে পর্যটকদের এই আগমন হয়তো থেমে যাবে। বিপুল রাজস্ব হারাবে দেশের পর্যটন খাত।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পরপরই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে যাতে ২২ সালের মধ্যেই বাসস্ট্যান্ডের কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ ঠিকাদার কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখায় জেলা প্রশাসক মহোদয়, জেলা আওয়ামিলীগ সভাপতি মিলে আমরা ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করেছি যাতে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে আমরা উদ্বোধনে যেতে পারি।
তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র ঠিকাদারের গাফেলতির কারনে এই কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আমাদের আর্থিক বা প্রশাসনিক কোনো সমস্যা নেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গিয়াস উদ্দিনের স্বত্বাধিকারীর মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, বাসস্ট্যান্ডের কাজ গাফেলতির কারনে বিলম্ব হচ্ছে না জমি অধিগ্রহণের কিছু ঝামেলা ও বালু ইজারাদার নিষেধাজ্ঞা সহ বেশকিছু কারনে আমাদের দেরি হচ্ছে। তবে এখন বেশি বেশি মালামাল নেয়া হচ্ছে এবং জনবল বৃদ্ধি করে দ্রুত গতিতে কাজ করানো হচ্ছে। আশাকরি চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো: মহিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের কুয়াকাটা আজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে । তারই ধারাবাহিকতায় বাসস্ট্যান্ডের কাজ শুরু হলেও একটু ধীরগতি হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমি, জেলা প্রশাসক, পৌরসভা সমন্বয়ে বৈঠক করেছি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি কাজ দ্রুত শেষ করতে। তাঁরা আমাদের সর্বশেষ
প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চলতি মার্চ মাসের ৩০ তারিখের পরে আমরা উদ্বোধনে যেতে পারবো।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post