মসিয়ার রহমান কাজল,বেনাপোল: যশোরের শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে একদিনে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে এক জনের লাশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় এবং দুইজনের লাশ নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে ২টি এবং বিকালে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তিনটি লাশই যশোর জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে দাফন হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, গতকাল বিকেলে শার্শা থানার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে ভাসমান অবস্থা একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশটি হলো বেনাপোল পোর্ট থানার দীঘিরপাড় গ্রামের জামিলুর রহমানের ছেলে সাকিবুর রহমান। এর আগে সকালে একই এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে সাবু হোসেন ও কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সীমান্তের পাঁচভুলোট ও পুটখালী থেকে উদ্ধার করা হয়।
সাকিবুরের মামা আজগার আলি জানান, সাকিবুর ট্রাকের হেলপারি করে। সে গত মঙ্গলবার ট্রাকে হেলপারি করার জন্য দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বুধবার বিকেলে লোকমুখে খবর পেয়ে শার্শার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে গিয়ে সাকিবুরের লাশ শনাক্ত করি। পরে জানতে পারি লোভে পড়ে স্থানীয় কিছু চোরাকারবারিদের সাথে সে মঙ্গলবার রাতে চোরাচালানী পন্য আনতে গিয়েছিল ভারতে। কিভাবে তার মৃত্যু হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো সে দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় হেলপারির কাজে। আজ সীমান্তে তার লাশ পেলাম। তার মৃত্যুর কারন কিভাবে জানবো।
সাবু হোসেনের স্ত্রী জানান, সকালে তারা লোক মুখে খবর পান পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী পাড়ে তার স্বামী আহত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথেই তিনি মারা যান। মাঝে মাঝে সে মালামাল আনতে যেতো ভারতে এমনটিই জানান তিনি।
জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর বলেন, তার ভাই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতে থাকেন। তিনি ভারতীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে ওই দেশেরই নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় জাহাঙ্গীর অবৈধ পথে কয়দিন আগে ভারত থেকে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে সকালে লোকমুখে খবর পাই আমার ভাই জাহাঙ্গীররের লাশ পাঁচভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড়ে পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া জানান, গতকাল লোকমুখে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশগুল উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদের লাশ এখনও দাফন হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলা ও রুজু করা হয়নি। তবে সরকার বাদি অজ্ঞাত তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া কিভাবে এদের লাশ একদম সীমান্তে নদীর পাড়ে এলো এবং কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
খুলনা ২১-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার জানান, পাঁচভুলোট, অগ্রভুলাট ও পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে বুধবার সকালে ও বিকালে পৃথক পৃথক স্থানে লাশগুলো ইছামতি নদীর তীরে পড়ে দেখা যায়। পরে সকালে এবং বিকালে লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় ময়নাতদন্তের জন্য। বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু জানেনা বলে জানান।