Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 6:42 pm

যে কারণে গরু শুকর উট ও কুকুর খাওয়া নিষেধ

কোরিয়ানরা মনে করে, কুকুরের মাংশ খেলে কুকুরের মত সেক্স পাওয়ার হবে।

কুকুরের মত অনেক সন্তানের জনক জননী হতে পারবে।

কুকুরের মত তড়িৎ বুদ্ধিসম্পন্ন পরিশ্রমী ও সদা সতর্ক সন্তান পাবে।

কুকুরের মত বিশ্বস্থ ও পিতৃভক্ত সন্তান হবে।

কুকুরের মত সাহসী যোদ্ধা সন্তান হবে যারা চীনকে পরাস্ত করে জাতিকে রক্ষা করবে।

ট্যাবুঃ সব নিষেধেরই কারণ আছে। কারণ ছাড়া কখনোই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়না। সেই কারণ গুলো না জেনেই অনেকে তা ধর্মীয় বিধান হিসেবে মেনে চলেন।

ধর্মীয় বিধান অমান্য করার নামই ট্যাবু। যেমন হিন্দুরা গরু খায়না। মুসলমানরা শুকর খায়না। ইহুদিরা উট খায়না। তার মানে এই নয় যে, এইসব ধর্মের সবাই ধর্মীয় বিধান পুরাপুরি মেনে চলে। এইসব বিধান অমান্য করে যখন নিষিদ্ধ কর্ম করে তখনই সেটা ট্যাবু হয়ে যায়।

ট্যাবু হচ্ছে কোনো সমাজে এমন এক নিষিদ্ধ প্রথা যার পেছনে খুব জোরালো যুক্তি নেই। তাতে আছে কুযুক্তি এবং যুক্তিছাড়া ধর্মের বাণীর দোহাই।

একজন হিন্দুকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনারা গরু খান না কেন? জবাব মিলবে, গরু আমাদের মায়ের মত। এর দুধ খেয়ে শিশুরা বাঁচে, বড়রা পুষ্টি পায়। গরু কত পরিশ্রম করে খেতখামারে ফসল ফলাতে সহায়তা করে। এটি কত নিরীহ প্রাণি। তাই একে বধ করা অকৃতজ্ঞতা ও অনুচিত। তা ছাড়া গরু খেলে ফিতাকৃমি হয়, নানা রোগ হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

যদি প্রশ্ন করা হয়, সারা দুনিয়ার মুসলিম, খৃস্টান, ইহুদিরা গোমাংশ খাচ্ছে। কই তাদের তো কোনো সামাজিক, শারীরিক, মানসিক সমস্যা হচ্ছে না। তারা কি অকৃতজ্ঞ, রোগ-শোক বিষয়ে অজ্ঞ? তারা কি সবাই অনুচিত কর্ম করছে? উত্তর আসবে, অত শত জানিনে ভাই। আমাদের ধর্মে নিষেধ আছে তাই খাই না। যুক্তিটুক্তি বুঝি না। এটিই আসল কথা। ঈশ্বর নিষেধ করেছেন। ব্যস, যুক্তি আর অযুক্তি কি?

একই ভাবে একজন মুসলিমকে শুকরের মাংস না খাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ধর্মের নানান ব্যাখ্যা দেবে। শুকর নোংরা, এর মাংস নানা রোগ হয়। অনেক কথাই বলবে যা যুক্তিতে ও বাস্তবতায় টিকে না। সবশেষে বলবে, কুরআনে নিষেধ আছে। তাই খাই না। আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। এরপর আবার যুক্তি প্রমাণ কি ভাই! অথচ যারা খান তাদের কাছে শুকরের মাংস জনপ্রিয় খাদ্য । পৃথিবীর দামি হোটেলগুলোতে এটা ছাড়া চলে না।

গোমাংশ না খাওয়া হিন্দুর সোস্যাল ট্যাবু- পবিত্র ট্যাবু। ইহুদিদের শুকর ও উট না খাওয়া ট্যাবু। তেমনি মুসলিমদের শুকর না খাওয়াও ট্যাবু। সোস্যাল ট্যাবু ভাঙা খুব বাহাদুরির কাজ নয়। কারণ একটি জাতি বা গোষ্টির ট্যাবু তাকে বিলিন হওয়া থেকে বাঁচায়। রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।

যে কারণে শুকরের মাংস নিষিদ্ধঃ ইহুদিরা একটু আশ্রয়ের জন্য প্রায় ৪০ বছর মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে ঘুরাঘুরি করেছে। মরুভূমির প্রচন্ড তাপে তারা শুকরের মাংশ ঠিক মতো সংরক্ষণ করতে পারতোনা। যার ফলে ওই মাংশে বিপদজনক অনুরোগ জীবানু জন্মাতো। শুকরের এমন মাংশ খেয়ে তখন গণহারে অনেকের মৃত্যু ঘটেছিল। তখন তো অদৃশ্য অনু রোগজীবানু খালি চোখে দেখা যেত না। তাই মুসা নবীর সময় তৌরাত গ্রন্থে প্রথম শুকরের মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। পরে কোরানও তা নিষিদ্ধ করে। পবিত্র এই দুই ঐশী গ্রন্থই শুকরকে অপবিত্র প্রাণি ঘোষণা করে।

উটকে ইহুদিরা পবিত্র প্রাণি মনে করে। কথিত আছে নবী দাউদ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি মানত করেছিলেন যে, সুস্থ হলে উটের মাংশ খাওয়া চিরতরে ত্যাগ করবেন। তিনি সুস্থ্য হন এবং উট খাওয়া ছেড়ে দেন। উম্মত ইহুদিরা তাদের নবীর সুন্নাহকে অনুসরণ করে উট খাওয়া ত্যাগ করে। সেই থেকে ইহুদি ধর্ম উটকে পবিত্র প্রাণি ঘোষণা করে। এর মাংশ খাওয়া হারাম ঘোষণা করে। কালে কালে তা ট্যাবু হয়ে যায়।
অপরদিকে ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, তখনকার সময়ে ইহুদিরা জেরুজালেমে স্থিতু হলে তাদের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মরুভুমিতে চলাফেরা, ব্যবসা বানিজ্য, পুষ্টির জন্য উট ও উটের দুধ ছিল খুবই আবশ্যক। এই সব কারণে জীবিত উটের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। খেয়ে ফেললে তো কমে যাবে, তাই উট বধ নিষেধ করা হয়। একে পবিত্র প্রাণি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে এটি ইহুদিদের অন্যতম ট্যাবুতে পরিণত হয়।

কোরিয়ানরা যে কারণে কুকুর খায়ঃ কুকুর হিন্দু মুসলিম উভয়ের নিকট ঘৃনিত। কিন্তু কোরিয়ানরা কুকুর খাওয়ার পাগল। এব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ কিম বলেন, ১৪০০ শতকের দিকে চীন সম্রাট কোরিয়া দখল করে নেয়। শত বছর কোরিয়ার সামন্তরা স্বাধীনতার জন্য যু্দ্ধ করে। যুদ্ধে লাখ লাখ কোরিয়ান যুবক মারা পড়ে। পুরুষের অভাবে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যায়। বন জঙ্গলের বুনো কুকুরে দেশ ভরে যায়। তারা লোকালয়ে হামলা চালাতে থাকে। কুকুর গৃহপালিত পশু এবং শিশু ও বাচ্চাদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলতে থাকে। চারদিকে বুনো কুকুরের আতংক ছড়িয়ে গেল। সেই সাথে খাদ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারন করে।

এ অবস্থায় ফিউডাল কিং (চীন কোরিয়ার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের চোখে দেবতা হয়ে উঠেছিলেন) এক ঢিলে ৫/৬ পাখি মারার ব্যবস্থা করলেন। তিনি কোরিয়ানদের কুত্তা হত্যা করে খাওয়ার বিধান দিলেন। যুক্তি দিলেনঃ ক. কুকুরের মাংশ খেলে কুকুরের মত সেক্স পাওয়ার হবে।
খ. কুকুরের মত অনেক সন্তানের জনক জননী হতে পারবে। গ. কুকুরের মত তড়িৎ বুদ্ধিসম্পন্ন পরিশ্রমী ও সদা সতর্ক সন্তান পাবে। ঘ. কুকুরের মত বিশ্বস্থ ও পিতৃভক্ত সন্তান হবে।
ঙ. কুকুরের মত সাহসী যোদ্ধা সন্তান হবে যারা চীনকে পরাস্ত করে জাতিকে রক্ষা করবে।
সামন্ত রাজার গৃহিত ব্যবস্থা জনগনকে শিগগিরই আতংক মুক্ত করল। পুষ্টির চাহিদা মিটাল। জনগণকে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করল। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করল। কুকুর মাংশ ভক্ষণের ফলে বুনো কুকুরের সংখ্যা অনেক কমে গেল। মানুষ নিরাপদ হল। তাই
কুকুরের মাংশ এখনো কোরিয়ানদের অন্যতম প্রিয় এবাং দামী খাদ্য।

আসলে কোনো না কোনো কারণ থেকে নিষিদ্ধতার প্রলেপ দেয়ার পর তা ধর্মীয় বিধানে ঢুকানো হয়েছে।

(বিভিন্ন মাধ্যম ও চিন্তা থেকে তথ্য সংগৃহীত)।

– দৈনিক দেশতথ্য পত্রিকার জন্য নিবন্ধটি পাঠিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক শংকর মৈত্র। সম্পাদনা করেছেন আব্দুল বারী।