শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: উত্তরাঞ্চলে প্রতিটি গ্রামে চলছে ধানকাটার ভরা মৌসুম। এ সময় ধানকাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চড়া মজুরি দিয়েও প্রয়োজন মত কৃষিক শ্রমিক, সময় মত পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে নতুন কাঁচা ধান এক মন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ শত টাকা হতে সাড়ে ৮শত টাকায়।
এখন এক হাজার টাকা দৈনিক হাজিরা দিয়ে একজন ধানকাটা দিনহাজিরার কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। ধানকাটছে চুক্তিভিত্তিক। এতে করে একজন শ্রমিকের সারাদিন আয় হচ্ছে দুই হাজার হতে পঁচিশশত টাকা।
লালমনিরহাট জেলার প্রতিটি গ্রামের বিশাল বিশাল দোলায় প্রায় এক সাথে বোরো ধানের জমির ধান পেকেছে। শুধু এক বিঘা জমির ধান কেটে জমি হতে পাশের রাস্তায় তুলে দিতে খরচ নিচ্ছে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার হতে ৪ হাজার টাকা । ধান মাড়াইয়ের অতিরিক্ত খরচ তো আছে। তারমধ্যে নতুন ধানের বাজার মূল্য নিম্নমূখী। বাজার ভেদে সাড়ে ৭শত টাকা হতে সাড়ে ৮শত টাকায় প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে। ধানের ভালো দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। তবে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হলে হয়তো ধানের দাম একটু বেশি পাওয়া যেত, এমনটাই আশা করছে কৃষক। এবছর ধানের মৌসুম শুরু হতে পাকা পর্যন্ত ছিল খরা। তাই সম্পূর্ণ মৌসুম ছিল সেচ নির্ভর। তাই ধান চাষে খরচ বেড়েছে। খরার কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়েছ বেশী ফলে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৭ —১৮ মন হবে।
কৃষক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবাহান জানান, রংপুর অঞ্চলে এক সময় ধানকাটা শ্রমিকের কোন অভাব ছিলনা। বরং কাজের সন্ধানে দক্ষিণাঞ্চলে শ্রমিকরা ধানকাটতে যেত। এখন রংপুর অঞ্চলে ধানকাটা মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যায়না। কৃষি কাজে কায়িক শ্রম অনেক বেশী, তাই এই শ্রমে কেউ আসতে চায়না। দেশের প্রতিটি গ্রামে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইউনিয়ন পযার্য়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজ রয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষিত তরুণপ্রজন্ম শারীরিক শ্রম করতে আগ্রহী নয়। তারা তথ্য প্রযুক্তি, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, গামেন্টর্স, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নানা ধরণের বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী। তারা কৃষি কাজে পরিশ্রম বেশী তাই করতে আগ্রহী নয়। মজুরি বেশী হলেও নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে। কৃষিতে এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। ধানকাটা — মাড়াইয়ের কাজে এখন বিশাল বিশাল প্রযুক্তি নির্ভর হারবেষ্ট মেশিন দিয়ে করা হচ্ছে। মেশিনে এক বিঘা ধান কাটা মাড়াইয়ে দুই হাজার দুইশত টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে এখনো দেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক হারবেষ্ট মেশিন পৌচ্ছায়নি। দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
কৃষি ও কৃষক নিয়ে কাজ করেন এমন একটি এনজিও’র কর্মকতার্ আব্দুস জলিল আহম্মেদ জানান, কৃষিকে লাভজনক ও ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে কৃষি বিমা চালু করা খুব প্রয়োজন। সেই সাথে কৃষিকে সমবায়ের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ভাড়ায় সরকারকে দিতে হবে। এসব যন্ত্রপাতি সরকারি সেচ পাম্পের মত সমবায় ভিত্তিতে দলগত ভাবে পরিচালিত হতে হবে। তাহলে শস্য মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে ফসল সময় মত তুলতে না পারায় কৃষককে ক্ষতির সম্মূখিন হতে হবে না।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post