সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধার কলাম

একটি দেশের গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হলো বিশ্বস্ততা। এটা না থাকলে গণতন্ত্রের গ্রহনযোগ্যতা থাকেনা। সেই কারণে গণতান্ত্রিক চর্চায় এগিয়ে থাকা দেশ গুলোতে বিশ্বস্ততা জরিপের একটি ব্যবস্থা আছে। সেই নিরিখে সম্প্রতি সুইডেনের রাজনৈতিক দলগুলো ও দলের প্রধানদের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিশ্বস্ততার উপর একটি জরিপ হয়েছে।
এবার সেই জরিপে সুইডেনের ভেন্সটার পার্টির নেতা Jonas Sjöstedt বিশ্বস্ততার শীর্ষে স্থান পেয়েছেন। এই দলটি ছোট হলেও দলের নেতার উপর জনগণ সবচেয়ে বেশি আস্তাশীল বলে প্রতিয়মান হয়েছে।
অন্যদিকে ইসভেরিয়ে ডেমোক্রাট দলের নেতা Jimmi Åkesson জনগণের পক্ষে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা ও দায়ভারের কড়া সমালোচক। তিনি বলেছিলেন কেউ অসুস্থ হলে, এমনকি সর্দি জ্বর হলেও তিনি যেন ঘর থেকে বের না হন। এতে অন্যের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সেই তিনি কয়েক দিন আগে অসুস্থ অবস্থায় সংসদে এসেছিলেন। সাংবাদিকদের ক্যামেরা তার অসুস্থতা ধরে ফেলায় তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার কথার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে তার ওয়াক এজ ইউ টক কন্সেপ্টেরও বারোটা বেজে গেছে। মোট কথা বিশ্বস্ততার জরিপে তিনি পাস হতে পারেননি। সেই কারণে তার নেতৃত্ব এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও তার প্রধানদের উপর এধরণের জরিপ করলে ফল কি হবে তা বলে কারো বিরাগভাজন হতে চায়না। তবে একথা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ও সুইডেনের পলিটিক্যাল পরিকাঠামো এক নয়। এমন জরিপ বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হওয়াও অবিশ্বস্ততার সামিল। এই ধরণের জরিপ সেখানেই হতে পারে যেখানে গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাক্টিস রয়েছে। যেহেতু সুইডেন গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাসী। তাই এখানে এ ধরণের জরিপ মাঝে মধ্যে হতে থাকে।
সুইডেন বা সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে এ দিকগুলোর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। এখন যদি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সঙ্গে এখানকার সব বিষয়ে তুলনা করি সেটা হবে বড়ই বেমানান। কারণ বাংলাদেশের সর্বাঙ্গীন পরিকাঠামো এসব দেশের মতো করে এখনও গড়ে ওঠেনি। তারপরও আমি বিষয়টি তুলে ধরছি ভালো কিছু জানা এবং শেখার জন্য। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এসব তথ্য শুধু মাত্র লার্নিং ফ্রম লার্নার এবং লার্নিং বাই ডুইং কনসেপ্টের ব্যবহার শেখার জন্য কাজে লাগতে পারে।
পৃথীবির উন্নত দেশগুলোতে সৃজনশীল সমাজ বা দেশে রাজনীতিবিদদের কর্মের উপর বড়ই কড়া নজর রাখেন সাংবাদিকগণ। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যেমন বাকস্বাধীনতা থাকা দরকার ঠিক তেমনিভাবে সাংবাদিকদের মোরাল ভ্যালু, সঠিক তথ্য যুক্তিযুক্তভাবে প্রকাশ করার মতো পরিবেশ এবং দক্ষতা থাকতে হবে।
সে যাই হোকনা কেন, বাংলাদেশে ওই ধরণের পরিবেশ নেই বলে যে শুরু করা যাবেনা তা নয়। সময় এসেছে অতীতের চিন্তাচেতনা বা সংবিধানের নিয়ম কানুনকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে। আগের দিনের ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলের আইন কানুনের অবসান ঘটিয়ে দেশের চাহিদা অনুযায়ী নতুন আইন তৈরি এবং তার ব্যবহার শুরু করতে হবে। আইন ব্যবস্থার উপর বেশি করে কড়া নজর দিতে হবে। এর ব্যবহার যেন সবার জন্যই সমান ভাবে প্রযোজ্য হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হ। । মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমাতে হবে।
বাংলাদেশকে কোয়ালিটি লাইফের আওতায় আনতে হবে। প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। দুর্নীতির অবসান কল্পে টাকার ব্যবহার বন্ধ করে কার্ডের মাধ্যমে কেনাবেচা বাড়াতে হবে। শিক্ষাকে ভিজুয়ালিজম এবং অন দি জব ট্রেনিংয়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে। যাকে বলা যেতে পারে লার্নিং বাই ডুইং এবং লার্ন ফ্রম লার্নার। এই কনসেপ্টে জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্টাডি লোন দিতে হবে যাতে করে তারা বাবা মার উপর নির্ভরশীল না থাকে।
রাজনৈতিক কর্মীদের জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সম্ভব হলে সবাইকে একটি গ্রহণযোগ্য বেতন দিতে হবে। সবাই যেন ট্যাক্স পে করে সেদিকে নজর দিতে হবে। শুধু বেতন বাড়ালেই বা সুযোগ সুবিধা দিলেই হবে না। সকল কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে তারা সব সময়ের জন্য নিয়োগযোগ্য থাকে।
অন্যান্য ভাষার তুলনায় বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। যাতে করে জন্মভূমির প্রতি সকলের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। যেমন সুইডেনে সামান্য ক্লিনার পদে কাজ করতে গেলেও তারা প্রথমে জিঙ্গেস করবে সুইডিশ ভাষা জানা আছে কিনা। একজন বিদেশি তার মাতৃ ভাষার পাশাপাশি আরো দুই-তিনটি ভাষা জানা সত্ত্বেও তাকে সুইডিশ জানতেই হবে।
সর্বপোরি গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস এবং জনগণের মূল্যায়ন করতে হবে। এ্যগ্রী ট্যু ডিজ এ্যগ্রী কনসেপ্টের উপর রেসপেক্ট বাড়াতে হবে। জাতির পিতা এবং জাতীয় সঙ্গীতের উপর কোন দ্বিমত পোষন করা যাবে না। মনে রাখতে হবে প্রেসিডেন্ট বা মন্ত্রী আসবেন যাবেন তবে জাতির পিতা একটি দেশে একজনই থাকেন। জাতির পিতার ছবি অফিস-আদালতে কর্মীদের পিছনে নয় সামনে ঝুলাতে হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাঁকে এবং তাঁর স্বপ্নকে মনে করিয়ে দিবে। আমাদের উদ্দেশ্য হবে সোনার বাংলা গড়তে আমাদের সিদ্ধান্তে আমরা যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকি এবং এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করছি, এমন মনোভাব হৃদয়ে গড়তে হবে।
মনে রাখতে হবে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না। যদি জীবনে কখনও আঁশে কঠিন ঝড় আমরা যেন ভুলে না যায় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালো বাসি।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।