মোঃ ফয়সাল আলম রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ জনতা দেড় শতাধিক মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে একটি খানকা শরীফে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে।
এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান ভান্ডারী প্রায় ১৫ বছর আগে পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারী গাউছিয়া পাক দরবার শরীফ’ নামের খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের কাছে ‘পীর’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর এখানেই ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়।
এবার বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের মিলাদের আয়োজন ছিল। সেখানে নারী শিল্পীদের অংশগ্রহণ, ভান্ডারী ও মুর্শিদী গান পরিবেশনের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
আজিজুর রহমান ভান্ডারী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই কিছু লোক অনুষ্ঠান বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছিল। গতরাতে তারা পবা থানায়ও গিয়েছিল। জুমার নামাজের পর তারা একত্রিত হয়ে খানকায় হামলা চালায়।’
হামলার আশঙ্কায় ওইদিন খানকা এলাকায় দুই গাড়ি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলামও ঘটনাস্থলে ছিলেন। তবে হামলার সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও জনতাকে থামাতে পারেনি।
হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, দেড় শতাধিক মুসল্লি টিন দিয়ে ঘেরা খানকায় হামলা চালাচ্ছে। টিনের ঘের মুহুর্মুহু আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ এত বেশি ছিল যে অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে কিছু করা সম্ভব হয়নি। এখন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আজিজুর রহমান ভান্ডারী বলেন, ‘আমি বের হইনি। ভক্তরা আমাকে বাড়িতে রেখেছে। হামলাকারীরা আমার বাড়িতেও ইট-পাটকেল ছুড়েছে।’তবে তিনি থানায় কোনো অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘যেখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু করতে পারেনি, সেখানে অভিযোগ করব কার কাছে? আমি মানবধর্ম করি, সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন।’
ভান্ডারী দাবি করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপির সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গতরাতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু হামলার সময় ছিলাম না।’
পবা উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন, ‘খানকা ভাঙার দরকার কি? যার যেটা বিশ্বাস, সে সেটা করবে। বিএনপি হলেও ছাড় নেই।’
জামায়াতে ইসলামীর পবা উপজেলার আমীর আযম আলীও দায় অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের দলের কেউ হামলায় যায়নি।’
ঘটনার পরও থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। হামলার শিকার আজিজুর রহমান ভান্ডারী অভিযোগ না করে বরং হামলাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।

Discussion about this post