মো. ফয়সাল আলম, রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন বাসচালক আকরাম আলী (৫২)। তাঁর মেয়ে রাকিয়া আলফি চলতি এসএসসি পরীক্ষার একজন পরীক্ষার্থী। বাবার মৃত্যুতে শোকাহত হয়েও বৃহস্পতিবার সকালে বাবার লাশ ঘরে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধ্য হন তিনি।
নিহত আকরাম আলী নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার মৃত আজদার আলীর ছেলে। তিনি পেশায় বাসচালক এবং রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় তাঁর ছেলে হাসান ইমাম অনন্ত বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামি নান্টু সম্প্রতি তাঁর স্ত্রীকে মারধর করলে প্রতিবাদ করেন আকরাম আলী। কারণ, ওই গৃহবধূ আকরামের স্ত্রীর আত্মীয়। এরপর থেকেই নান্টু ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং আকরামের মেয়ে রাকিয়াকে উত্যক্ত করতে শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার আগের দিন বিকেল ৪টার দিকে রাকিয়া আলফি প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় নান্টু নিজেই রাকিয়াকে গালিগালাজ করেন। এ বিষয়ে নালিশ করতে আকরাম তাঁর (নান্টুর) মা-বাবার কাছে গেলে ওই রাতেই হামলার ঘটনা ঘটে।
বুধবার রাত ১০টার দিকে তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম আলী ও তাঁর ছেলে হাসান ইমামের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন আকরাম। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো. নান্টু (২৮), মৃত রতন মিয়ার ছেলে মো. বিশাল (২৮), মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে খোকন মিয়া (২৮), মো. শাহীনের ছেলে তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে হাসান ইমাম বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
বৃহস্পতিবার এসএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। বাবার লাশ রেখে রাকিয়া পরীক্ষা দিতে যান রাজশাহীর শিরোইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। তিনি অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থী রাকিয়ার বাবাকে শুধু প্রতিবাদ করায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর কঠোর বিচার চাই।”
নিহতের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, “আমার স্বামী শুধু মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়েই খুন হলো। ওরা আমার মেয়েকেও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। মেয়েটা বাবার লাশ রেখে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষা দিতে গেল। এর বিচার চাই। ওদের ফাঁসি চাই। “

Discussion about this post