মো. ফয়সাল আলম রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়াশ খুশি বোরো চাষিরা। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ ধানের ফলন পেয়েছে চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা জমি থেকে মাড়াইয়ের পরে দুই রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে- বৃহস্পতিবার (৮ মে) সর্বশেষ তথ্যমতে, জেলায় ২৫ শতাংশ ধান কেটে কৃষক ঘরে তুলেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ফলন ভালো হলেও এখনও ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ধান চাষীদের জমিতেই রয়েছে। অনেকের জমির ধান আধাপাকা অবস্থায় রয়েছে। এবছর বৈশাখ মাস চলে গেলেও তেমন ঝর, বৃষ্টি হয়নি। কয়েকটি উপজেলায় হালকা শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে তেমন ক্ষতি হয়নি ধানে। তবে এই সপ্তায় ঝর শিলাবৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
তানোরের ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আফসা আলী দুই বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ৪০ মণ ফলন পেয়েছেন। তিনি বলেন, যারা নিজস্ব জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন তাদের প্রতি বিঘায় ২০ হাজার ও যারা লীজকৃত জমিতে চাষাবাদ করেছেন তাদের খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা। তবে যাদের সেচ ব্যবস্থা ভালো না তাদের আরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে।
আব্দুস সালাম নামের একজন চাষি জানান, তার এক বিঘা জমিতে ২৫ মণ ধানের ফলন হয়েছে। সেই হিসেবে সর্বোচ্চ ধানের ফলন হয়েছে তার জমিতে। আশা করছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে তার আরও সাত বিঘা জমির ধান কাটা সম্পন্ন হবে তিন দিনের মধ্যে। এক সপ্তার মধ্যে তিনি সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শুনেছি আড়তে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে।
ধান কাটা শ্রমিক আক্তার হোসেন বলেন, এক বিঘা জমির ধান কাটতে চারজন শ্রমিক লাগে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ যেসব ধান জমিতে পড়ে গেছে সেগুলো পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলেও ভ্যাপসা গরমের কারণে জমিতে টেকা যাচ্ছে না।
জেলার শুধু সমতল ভূমিতে নয়- বরাবরের মত এবছর পদ্মার চরে বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। জেলার পবা, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার পদ্মার নদীর চরে বোরো ধানের চাষ করেছেন চাষিরা। এরমধ্যে পবায় ৮৩৭ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৮০০ হেক্টর ও বাঘায় ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। চাষীরা বলছেন- চরেও ভালো ফলন হয়েছে বোরো ধানের।
পবা উপজেলার চরখিদিরপুর ও ১০ নম্বর চরে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে। পদ্মার চরের চাষী মিরশাদ আলী সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। মিরশাদ আলী বলেন, পলিপড়া জমিতে বেশি কিছু দেওয়া লাগে না। এবার ভালো ধান হয়েছে। তবে এই জমির কোনো নিশ্চয়তাই নেই। এ বছর ধান হচ্ছে, সামনেরবার হয়তো দেখা যাবে এখানেও গভীর পানি।
গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চাষী ও সাবেক ইউপি সদস্য ওসমান গাণি বলেন, এই চরে যারা ধান চাষ করেছেন, তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার জেলায় মোট বোরো চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে পদ্মা নদীর চরে চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে চাষীরা ২৫ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছে। তাতে ফলন হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ মণ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষীরা বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি করছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, আমরা বারবার চাষীদের বলছি পাকা ধান কেটে নিতে। বৃষ্টি হলে সমস্যা হবে না। তবে শিলা বৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি হবে। তাই পাকা ধান মাঠে না রাখার বিষয়ে চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Discussion about this post