চলতি বছর রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে চলে টানা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। সঙ্গে ছিল মেঘের গর্জন ও বজ্রপাত। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া কার্যালয়। এটি এবছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, গত দু’দিন থেকে রাজশাহী অঞ্চলে ভারি বর্ষণের সম্ভবনা ছিল। এরই প্রেক্ষিতে রোববার বিকেল ৩টার পর থেকে প্রথমে গুড়িগুড়ি পরে সেটি ভারি বর্ষণে রুপ নেয়।
বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। এরই মধ্যে জলমগ্ন রাস্তায় মশারি দিয়ে অনেকেই মাছ শিকারে নেমে পড়েন।
রাজিব খান বলেন, রোববার বিকেলে টানা প্রায় তিন ঘন্টা ভারি বৃষ্টি হয়েছে। তিন ঘন্টায় রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে যা এবছরে এর আগে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমনটাই ঢাকা থেকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে পুরো রাজশাহী নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের মধ্যেও কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নগরীর উঁচু এলাকা উপশহরের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তোলিয়ে যায়। নগরীর বর্ণালী মোড় থেকে হেতেমখাঁ হয়ে যাদুঘরের মোড় পর্যন্ত হাঁটু পানির সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে কোমর পর্যন্ত পানি জমে রাস্তায় ও নিচু বাড়িঘরে। জিরোপয়েন্টের মত এলাকার রাস্তায় ছিল হাঁটু পানি। এছাড়াও নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ছোট বড় রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধাতা সৃষ্টি হয়।
নগরীর আহম্মদনগর এলাকার অনেক পাকা বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। স্কুল শিক্ষিকা কেয়া খাতুন বলেন, স্কুল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়িতে ফেরার সময় দেখি বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটু পানি। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখি বাড়ির ভেতরে রাখা স্যান্ডেল, জুতা, প্লাস্টিকের খালি বালতি পানিতে ভাসছে।
অপরদিকে বৃষ্টি ছেড়ে গেলেও নগরীর প্রতিটি রাস্তায় পানি জমে ছিল। বৃষ্টি ছাড়ার পর টানা দুই ঘন্টাতেও রাস্তার পানি নিস্কাশন হয়নি। এমনকি অনেক এলাকায় পুরো রাতভরও রাস্তায় ও বাড়িতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন হবে না বলেও স্থানীয়রা মনে করছেন।
বিশেষ করে ভারি বৃষ্টি না হওয়ার কারণে নগরীর পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো ময়লায় ভরাট হয়ে আছে। সেগুলো পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেও ড্রেনের পানি উঠে আসছে রাস্তায়। নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীতে ড্রেন নির্মাণ করার সময় পানি আটকানোর জন্য ড্রেনের মধ্যে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো আর তোলা হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে পানি ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশিত না হয়ে রাস্তার পানি উপচে ঢুকে যাচ্ছে বাসা বাড়িতে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসিকে।
বৃষ্টির পর নগরের মহিষবাথান এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির সঙ্গে মাছও রাস্তায় উঠে আসে। ওই এলাকার মানুষ মশারি দিয়ে রাস্তায় মাছ ধরেছেন।
এ ছাড়া নগরের বর্ণালী মোড় এলাকায় প্রধান সড়কে হাঁটুসমান পানি জমে। বর্ণালী মোড় থেকে সাহেব বাজারের দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাটিও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বর্ণালী মোড় থেকে পূর্বে কাদিরগঞ্জ হয়ে দড়িখড়বোনা-রেলগেট সড়কেও হাঁটুসমান পানি জমে।
নগরের উপশহর, ভদ্রাসহ মূল শহরের বাইরের এলাকাগুলোও জলাবদ্ধ হয়ে যায়। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নগরের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, তাঁদের এলাকার সব গলিতে পানি জমেছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post