মো. ফয়সাল আলম, রাজশাহী প্রতিনিধি : “প্রাণের টানে এসো মিলি প্রিয় প্রাঙ্গণে” এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১ম পুনর্মিলনী উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫২ বছর বয়সী এই বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী হলো এবার।
শুক্রবার দিনব্যাপী এই আয়োজনে এসেছেন সহস্রাধিক প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থী। কেউ কবিতা শুনে হাসছেন। কারও মন একেবারেই সেদিকে নেই। তাঁরা ছবি তুলতে ব্যস্ত। বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকমের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে এসেছেন। কেউ কেউ নিজের ছেলেমেয়েদেরও একই রঙের পোশাক পরিয়ে এসেছেন। রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অতীতকে তাঁরা যেন বর্তমানে টেনে এনেছেন।
অনুষ্ঠানে আসা এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী যিনি এখন রাজশাহীর শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মাহমুদা খন্দকার তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, প্রথমবারের মত আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এখানে এসে পুরাতন বন্ধুবান্ধবদের সংগে দেখা হলো,কথা হলো। অনেক অনেক ভালো লাগলো।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় কলেজ মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মিলনমেলার শুভ সূচনা হয়।
এরপর প্রধান অতিথি বেলুন উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সকাল ১০টায় মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে সোনাদিঘি মোড় প্রদক্ষিণ করে কলেজ মাঠে এসে শেষ হয়। অতিথিদের আসন গ্রহণের পর এ্যালামনাই কমিটির সদস্যরা ফুলেল শুভেচ্ছায় তাদের বরণ করে নেন। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন ও গীতা পাঠের মাধ্যমে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও সম্মিলিত শোক প্রকাশ করা হয়।
মিলনমেলায় ছিল শোভাযাত্রা, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, স্বাগত বক্তব্য, স্মৃতিচারণ, স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, সম্মাননা স্মারক প্রদান, লটারি, খেলাধুলা, পুরস্কার বিতরণ ও আতশবাজিসহ জমকালো সাংস্কৃতিক আয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ ইব্রাহিম আলী। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর পার্থ সারথি বিশ্বাস।
বক্তব্য পর্বে আয়োজক কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টামণ্ডলী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পরে বিভিন্ন বর্ষের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। এ সময় স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং প্রাক্তন শিক্ষক ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক আজমত আলী রকি বলেন, এত আনন্দ আর উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে, এই পূনর্মিলনী এত দেরিতে কেন হলো আফসোস করছি যে আগে কেন করা হয়নি।
বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর পার্থ সারথি বিশ্বাস বলেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে আমি শিক্ষক হিসেবে সকল প্রাক্তনের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কলেজ উপাধ্যক্ষ বলেন, এলামনাই কমিটিকে অনুরোধ করব একটি স্থায়ী এলামনাস গঠন করতে, যাতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় সহায়তা পায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, এমন মিলনমেলার মাধ্যমে প্রাক্তন ও বর্তমানদের মধ্যে যে সেতুবন্ধন তৈরি হয় তা ভবিষ্যতে অনেক কাজে আসে। নতুনরা পুরনোদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার বলেন, এই মিলনমেলার মাধ্যমে আমরা একটি সম্পর্কের বন্ধন গড়ে তুলেছি। মনোবিজ্ঞান বিভাগের এ আয়োজন যেন বারবার হয়, সেই প্রত্যাশা করছি।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। বিকেলের খেলাধুলায় হারিয়ে যান সবাই স্মৃতির পাতায়। সন্ধ্যায় আতশবাজির আলোয় শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর আয়োজনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফিরে যান তাদের হারানো দিনগুলোতে।