রাশেদুজ্জামান, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরের বিশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির মূল্য হিসেবে ৫০হাজার টাকায় গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে রফাদফা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোপনে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে এমন রফাদফা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নের মাধ্যমে জানা যায় যে, গত রবিবার (১৭ আগস্ট) বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্র জোরপূর্বক একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ২য় তলা থেকে হাত ধরে ৩য় তলার এক ব্যাথরুমে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ব্যাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিলে ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ১০ম শ্রেণির অন্যান্য ছাত্ররা বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রীকে উদ্ধার করে। এই বিষয়ে ছাত্রীর বাবা উপযুক্ত বিচারের আশায় অভিযোগ দিলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিদ্যালয়ে একটি গ্রাম্য শালিস অনুষ্ঠিত হয়।
শালিসে ছাত্রের এক লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত ছাত্রের পরিবার মেনে না নিলে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি আবেদনপত্র লিখেন। কিন্তু সেই আবেদনপত্র রহস্যজনক ভাবে প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর না দিয়ে গত ২০ আগস্ট গোপনে গুটিকয়েক স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ছাত্রের ৫০হাজার টাকা জরিমানা করে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি আপস করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় একজন প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশিয়া গ্রামের একজন বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত গ্রাম্য শালিসের একজন সদস্য জানান বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মেয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করে প্রশাসনের কাছে যাওয়া থেকে বিরত রাখেন। এরপর গত বুধবার (২০আগস্ট) অত্যন্ত গোপনে ওই দুই ব্যক্তির যোগসাজসে গুটিকয়েক ব্যক্তিদের নিয়ে ছেলের ৫০হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।
ছাত্রীর বাবা বিশিয়া গ্রামের ভ্যানচালক এনামুল মুঠোফোনে জানান, প্রথম দিকে তিনি এমন ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু স্থানীয়দের চাপাচাপিতে ছেলের পরিবারের সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নিয়েছেন। তিনি টাকা দিয়ে মিটমাট করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। (ভিডিও ও অডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে)।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজারুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান ভুক্তভোগীদের ও স্থানীয়দের চাহিদা মোতাবেক ২০আগস্ট রাতে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে। ছাত্র পক্ষের জরিমানা ছাড়াই বিষয়টি হাত ধরে মাফ চাওয়ার মাধ্যমে মিমাংসা করা হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে জানান,কোন জরিমানা ছাড়াই বিষয়টি স্থানীয় ভাবে শালিসের মাধ্যমে রফাদফা করা হয়েছে। ৫০হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যে।
পারইল ইউনিয়নের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হোসেন জানান বিষয়টি জানার পর গত ১৯আগস্ট তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। মেয়ের বাবা স্থানীয় ভাবে বিষয়টি সমাধান চান না বলে তিনি মেয়ের বাবাকে পরের দিন থানায় আসতে বলেন। কিন্তু মেয়ের বাবা পরের দিন গত বুধবার (২০ আগস্ট) রহস্যজনক ভাবে থানায় আর আসেননি। তবে তিনিও লোকমুখে ৫০হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করার বিষয়টি জেনেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান জানান বিষয়টি তিনি লোকমুখে জেনেছেন। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Discussion about this post