Print Date & Time : 14 May 2025 Wednesday 3:43 am

রামগঞ্জে ওএমএসের চাল খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে: হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ওএমএসের চাল বেশি দামে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পেয়ার হোসেন নামে একজন ডিলারের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় বরাদ্দের বেশির ভাগ চাল বেশি দামে খোলাবাজারে ও কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এতে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শতশত হতদরিদ্র সুবিধাভোগী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় রামগঞ্জ বাজারের নন্দনপুর এলাকায় ডিলার পেয়ার হোসেনের চাল বিক্রয় কেন্দ্রে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে চাল কিনতে আসা কয়েকজন হতদরিদ্রদের চাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।

এসময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮০ থেকে ১০০ জন হতদরিদ্রের কাছে চাল বিক্রি করে কেন্দ্র বন্ধ করে দেন ডিলার।
এরপর প্রথমে বরাদ্দকৃত বাকি সব চাল নকল টিপসই ও অন্যের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে ভুয়া তালিকা তৈরি করে সব চাল বিক্রি হয়েছে বলে দেখান ডিলাররা। পরে বেশি দামে এসব চাল খোলাবাজার ও কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। গত কয়েকমাস এভাবেই ওএমএসের চাল বিক্রি করে আসছেন অভিযুক্ত ওই ডিলার।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাজার মূল্য উর্ধগতির প্রবনতা রোধ করতে নিম্মআয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেয়া এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ওএমএসের চাল বিক্রি করছে সরকার। সরকারের এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ উপজেলায় ৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার জন্য একজন ডিলারকে প্রতিদিন এক মেট্রিক টন করে চাল নিয়মিত বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দকৃত চাল তারা ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ২০০ জন হতদরিদ্রের কাছে বিক্রি করবেন। জনপ্রতি ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারবে সুবিধাভোগীরা।

চাল কিনতে আসা হতদরিদ্র রিকশাচালক শফিক, দিনমজুর জহির, স্বপন সহ ৮-১০ জন সুবিধাভোগী এসময় অভিযোগ করে বলেন, ডিলার পেয়ার হোসেন প্রতিদিন এক মেট্রিক টন চাল বিক্রির জন্য বরাদ্দ পান। কিন্তু ডিলার খাদ্যগুদাম থেকে চাল বের করার সময় বেশিরভাগ চাল অন্যত্র সরিয়ে নেন। এরপর তাঁর বিক্রয় কেন্দ্রে ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যেই চাল বিক্রি শেষ দেখিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে দেন। পরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া চাল একটি চক্রের মাধ্যমে দরিদ্র ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। ৩০ কেজির বস্তা ১২৫০- ১৩৫০ টাকায় বিক্রি করে ডিলার। এ নিয়ে সুবিধাভোগীরা প্রতিবাদ করলে ডিলারের লোকজন হুমকি-ধমকি দেন।

শফিকুল ইসলাম নামের একজন রিকশাচালক বলেন, রাস্তায় আগেরমত ভাড়া নেই। প্রতিদিন আড়াইশো তিনশো টাকা ভাড়া মারা যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনরকম বেচে আছি। বাজারে চালের দাম বেশী তাই সরকারি চাল কিনতে আসছি। কিন্তু ডিলার চাল দেয়নি।

সোহাগ হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, পেয়ার হোসেন একজন ঠিকাদার। আমাদের ঠিকাদারের অধিনে অনেক লেবার কাজ করে। তাদের খাওয়ানোর জন্য পেয়ার হোসেনের কাছ থেকে প্রতিবস্তা ১২৫০ টাকা করে ৩ বস্তা চাল কিনেছেন তিনি। তবে কোন ঠিকাদারের নির্দেশে চাল নিয়েছেন জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে যান তিনি।

অভিযুক্ত ডিলার পেয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন অফিসে অনেক খরচ (টেবিলে টেবিলে টাকা) দিতে হয় । সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চাল বিক্রি করলে এসব খরচ কিভাবে দিবো। খরচ না দিলে তো ডিলারই থাকবো না। তাই বেশি দামে চালের বস্তা বিক্রি করতে হচ্ছে।

ট্যাগ অফিসার শরিফুল্লা শামস বলেন, বেশি দামে চাল বিক্রি করার বিষয়টি জানিনা, তবে বস্তায় কমতি থাকায় চাল মাপে ২-৩ শ গ্রাম কম দিতে পারে। খরচের বিষয়টি সঠিক নয়।

খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র দেবনাথ বলেন, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার অর্ডার পেলে আমরা ডিলারদের চাল ডেলিভারি দেই। ডিলার চাল নিয়ে কার কাছে বিক্রি করলো তা আমার জানার বিষয় নয়। আর জানলে কেন বলবো?।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার অফিসে কোন কাজেই খরচ নেয়া হয়না। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করা যাবেনা

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//