মো:ফয়সাল আলম,রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। বর্ষা মৌসুমে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে অসংখ্য পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকে। ওই সব পানিতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিশ মশা ডিম পাড়ে। এই ডিম লার্ভা, পিউপা ও উড়ন্ত মশায় পরিণত হয়। এখনই জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাপক হারে না বাড়ালে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর আকার ধারন করেছে। অন্য জেলার ন্যায় রাজশাহীতেও শনাক্ত হয়েছে ডেঙ্গু রোগী। ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত প্রায় এক মাসে ২৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে তিনজনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে তিনজনই বাঘা উপজেলার। তবে শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও বলা হচ্ছে যাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে তারা উপজেলার বাসিন্দা। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা বাইরের জেলা থেকে এই রোগ বহন করে এনেছে। তবে রাজশাহীর সিভিল সার্জন বলছেন, রাজশাহীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী বিভাগীয় শহর হলেও এখানে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু মাত্র কীট।
জানা গেছে, গত জুন মাস থেকে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হতে থাকে। শুরুর দিকে এর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। আগে দু’একজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় নড়েচেড়ে বসেছে রাজশাহী সিভিল সার্জন। সম্প্রতি একসাথে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী রামেক হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে রাজশাহী জুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় আশংকাজনক হারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ঢাকা থেকে অনেকেই গ্রামে চলে আসে ছন। বিশেষ করে ঈদের সময় অনেকেই ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে ডেঙ্গু বহন করে রাজশাহীতে এসেছেন। তার মধ্যে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৬ জন রয়েছে। যদিও এই ৬ জনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এমনটাই ধারণা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। জেলা, উপজেলার হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সচেতনমূলক সভা, সেমিনারও করা হচ্ছে।
সচেতনমূলক প্রচারপত্র বিলিরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় জেলা, উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে ডেঙ্গুর প্রস্তুতি স্বরুপ রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড হিসাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে ১৮টি বেড রয়েছে। অবস্থা বুঝে বেড সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহমেদ জানান,‘ রাজশাহীতে এখনও ডেঙ্গুর তেমন প্রভাব নেই। তারপরও ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ডেঙ্গু রোগিদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় গত কয়েকদিন থেকে সভা, সেমিনার করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথেও ভার্চুয়ালী আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগকে ভয় না করে সচেতন হলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো।’
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//