শাহ্ আলম ভূঁইয়া, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: রাজধানী ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর পাস। চাকরি করতেন ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে। বেতন ও অন্যান্য সুবিধাসহ মাসে পেতেন দেড় লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে ঝুঁকি নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন আশরাফুল ইসলাম খান হিমেল (৩৬)। শুরু করেন টাইলস ও স্যানেটারি ব্যবসা। প্রথম দিকে কঠিন সময় পার করলেও এখন তিনি সফল।
হিমেলের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কালীপুর মহল্লায়। চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসা করছেন শুনে অনেকেই কটুক্তি করতো। এমনকি পরিবারের লোকজনও আফসোস করত। ছিল পুঁজির সংকট। তাই উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ ছিল না। কিভাবে হলেন সেই গল্পটা শোনা গেলো তার মুখ থেকেই।
হিমেল বলেন, ২০০৫ সালে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করি। একদিন দুপুরে খাবার চাইলে অফিসের অ্যাসিস্টেন্ট মুখের ওপর বলে জিএম স্যার খাবে। তখন থেকে চ্যালেঞ্জ নেই বড় পদে যাওয়ার। বিবিএ ও এমবিএ পাশ করে কয়েকটি কোম্পানিতে চাকরি করি। ২০১৮ সালের মে মাসে একটি কোম্পানিতে জিএম পদে যোগ দেই। কিন্ত নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ২০২০ সালের মার্চে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসি।
২০১৯ সালের আগস্টে পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে গৌরীপুর শহরের কালীপুরে একটি ভাড়া দোকানে যাত্রা শুরু করে হিমেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরিবা খান টাইলস অ্যান্ড স্যানেটারি। শুরুর দিকে বাবা ও ছোট ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে পুরোদমে ব্যবসার দায়িত্ব নেন হিমেল। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন শহরে টাইলস, স্যানেটারি এবং ডোরের চারটি শোরুম এই তরুণ উদ্যোক্তার। সেখানে তিনি কর্মসংস্থান করেছেন নিজের স্কুল সহপাঠীসহ দশ ব্যক্তিকে।
জিএম পদে থাকাকালীন মাসে যে টাকা বেতন পেতেন হিমেল এখন চারটি শোরুম থেকে মাস শেষে আয় তার বেশি। ব্যবসায়িক পরিধি বাড়িয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে নিজের প্রতিষ্ঠানে শতাধিক তরুণের প্লাটফরম গড়তে চান। যারা দাপিয়ে বেড়াবে সারাদেশ এমনটাই তার লক্ষ্য।
হিমেল বলেন, সফল উদ্যোক্তা হতে হলে সততা, বিনয়ী, পরিশ্রমী ও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রবল সাহস থাকতে হবে। চাকরি ছাড়ার পর আমি তিন মাস বিভিন্ন টাইলস ও স্যানিটারি দোকান ঘুরে অভিজ্ঞতা নিয়েছি। পরে সেটা ব্যবসায় কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। এখন ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।
শিক্ষিত বেকার থেকে শুরু করে হতাশায় ডুবে থাকা যুবকরা হিমেলের পথে হাঁটতে পারেন বলে মনে করেন ময়মনসিংহ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচএম খায়রুল বাসার। তিনি বলেন, হিমেল যখন চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসে তখন অন্যদের মতো আমিও অবাক হয়েছিলাম। কিন্ত সে প্রমাণ করেছে পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে সফল হওয়া যায়।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৪ সেপ্টেম্বর-২০২২