কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামে লালন অনুসারী বৃদ্ধা চায়না বেগমের বাড়ি ঘর ভাঙচুর-উচ্ছেদ ও হেনস্তার প্রতিবাদে কুমারখালীর ছেঊরিয়ায় লালন শাহের মাজারের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২-রা জুলাই) সকাল ১১ টায় লালন অনুসারী ভক্ত অনুরাগীরা এই মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ভক্ত অনুরাগীরা হামলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একটি স্বাধীন দেশে কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বা মতে অনুসারীদের উপর এই ধরনের হামলা কাম্য নয়। চায়না বেগমের ভেঙে দেয়া ঘর পুনরায় তুলে দেয়া এবং এই ধরনের আর কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে করে সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মানববন্ধনে উপস্থিত ভক্ত অনুরাগীরা।
এ সময় চায়না বেগম বলেন, যেখানে আমার স্বামীর মাজার আছে, আমি সেখানেই থাকব। আমাকে যদি স্বামীর কবর থেকে সাপে খায়, বাঘে খায় তবুও আমি ওই জায়গায় থাকব। মাটিতে মিশে যাব। আমাকে কবর দিতে কাউকে আসা লাগবে না। তবু কোথাও যাবনা। আমার স্বামীর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী বাকী জীবন তার রওজার পাশেই থাকব। অন্য কোথাও যাব না। ওখানেই পুনরায় আমার বাড়িঘর ঠিক করে দেয়া হোক। আমরা লালন অনুসারী মানুষ। ভক্তবৃন্দ নিয়ে থাকি। নতুন করে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আলেক সাঁই নামে আরেক সাধু বলেন, প্রাণ থাকলেই প্রাণী হওয়া যায় কিন্তু হুশ না থাকলে কখনো মানুষ হওয়া যায় না। লালন শাহের মহান মানবতার ধর্মের অনুসারী আমরা। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম একটি মহান ভাব যা মানবতার কল্যাণ করে। প্রকৃত ধার্মিক কখনো অন্যের উপর হামলা অথবা নিজ মতাদর্শ চাপিয়ে দেয় না। এই ধরনের কাজ গ্রহন জনক নয় এবং আমাদের দাবি এর সুষ্ঠু বিচার হোক।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন একই গ্রামের কিছু মৌল মতাদর্শী বাসিন্দার হামলায় ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও নির্যাতনের শিকার হন চায়না বেগম। ঐ স্থানেই তার মৃত স্বামী গাজীর উদ্দিনের রওজা রয়েছে।
এ ঘটনায় গত ২৭ জুন সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন চায়না বেগম। ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানার এসআই খায়রুজ্জামান জানান, শুক্রবার বিকেল চারটায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় উভয়পক্ষকে ডেকে বৈঠকে বসে। সেখানে চায়না হয়বেগম ও বোন জামাই সাধু শাহাবুদ্দিন সাবুসহ স্থানীয় কাউন্সিলর মাতব্বর ও অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিলেন। চায়না বেগমের অনুমতি সাপেক্ষে এবং সকলের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমির পাশেই চায়না বেগমের ছেলে মজিবুর রহমানের ভিটা রয়েছে। সেই ভিটায় আলাদা করে চায়না বেগমের জন্য নতুন করে ঘরে করে দেওয়া হবে। এবং সেই ঘর নির্মাণের খরচ বহন করবে অভিযুক্তরা।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ওই বৃদ্ধা বাড়ি করেছেন একটি মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। সেখানে যাওয়ার পথ নেই, তাকে দেখারও কেউ নেই। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা হওয়ার আশঙ্কায় তার ঘরটি এলাকাবাসী ভেঙে দিয়েছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২ জুলাই ২০২৪