শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: আজ বৃহস্পতিবার সূর্যের দেখা মিলেছে লালমনিরহাটের আকাশে। এতে করে শীতের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে ফসলের মাঠে। কৃষিকাজে কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে।
এখন চলছে রোপা আমন ধানের চারা রোপনের সময়। এছাড়াও রবিশস্য শাকসবজি, আলু, বেগুন, টমেটসহ নানা ফসলের ক্ষেত পরিচর্যার সময়। উত্তরাঞ্চলের আদি অর্থকারী ফসল তামাক। এই তামাক পরিচর্যার পুরো মৌশুম চলছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারনে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে বিপর্য নেমে এসেছিল। রোদ উঠায় কিছুটা হলের স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। যার প্রভাব পড়েছে পুরোপরি কৃষি কাজে। প্রতিটি ফসলের মাঠে দেখা দিয়েছে কর্মচঞ্চলতা। ধুম পড়ে গেছে ধানের বিছন তোলা ও ধানের চারা রোপনের।
তীব্র শীতের কারনে ধানের বীজতলায় পাতামোড়ানো রোগ ও পঁচন রোধ দেখা দিয়ে ছিল। কৃষক বীজতলা নিয়ে উৎকন্ঠায় পড়ে গিয়ে ছিল। আবার রোপা ধানের চারা রোপনের সময় এসে গেছে। চারারোপনের এটা মোক্ষম সময় কিন্তু কনকনে ঠান্ডায় দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরা পানিতে নেমে রোপাধানের চারা রোপনে অনিহায় ছিল। কৃষক চরা দামেও কৃষি শ্রমিক মিলাতে পারছিলনা। এমনিতে গত কয়েক বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি গ্রামে কায়িকশ্রম ও কৃষি কাজের শ্রমিক পাওয়া খুবে দুস্কর হয়ে পড়েছে। কৃষি কাজ শ্রমভিত্তিক পরিশ্রমের ও ধৈর্যের কাজ। থাকতে হয় একাগ্রতা, আবার জানতে হয় কিছু কৌশল। রোপা আমন ধানের চারা লাগাতে হয় কেঁতকেঁতে কাদায় ও ছিপছিপে পানিতে। দীর্ঘ সময় ধরে পানি ও কাদায় ধানের চারা রোপন করতে হয়। শীতের দিনে যেটা কঠিন কষ্টের কাজ কিন্তু হাজার বছর ধরে এই কাজটি কৃষক ও কৃষি শ্রমিক গণ করে আসছেন। বাংলাদেশের কৃষক ফসল ফলিয়ে গোটা জাতির খাদ্যের যোগানদাতা। একমাত্র কৃষক যেকোন পরিস্থিতিতে এই কঠিন কাজটি সহজে করে থাকেন। করোনাপরিস্থিতিতে সারাদেশের মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখনো কৃষক কঠিন পরিস্থিতিতে ফসল ফলিয়ে খাদ্যোর যোগানের চাকা সচল রেখে ছিলেন।
ক’দিনের তীব্র শীতে সূর্যের দেখা ছিল না। এতে করে ঠান্ডার তীব্রতা কয়েক গুণ বেড়েগেছে। সেই পরিস্থিতি হতে কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটেছে। দুইদিন ঘরে একটু বিলম্ব হলেও সূর্য আকাশে দেখা যায়। দুপুর ১২টার পর হতে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত সূর্য মিটিমিটি করে আলো ও উত্তাপ ছড়ায় এতে করে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। দিনের এই তাপমাত্রা বাড়ায় কৃষিকাজে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। গ্রামের প্রতিটি ফসলের মাঠে ধুম পড়ে গেছে রোপা আমন ধানের বিছন তোলা ও রোপা আমন ধানের বিছন রোপনের।
এবছর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ছোঁয়া ও দেশের অর্থনৈতিক মন্দা বা মুদ্রাস্ফীতি এবং নানা অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার কারনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ভাটারটানা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রামের হাটবাজার গুলোতে কেনাবেচায় প্রভাব পড়েছে। গ্রামের হাটবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছে অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব গ্রামেও। কেনা বেচা আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এর জন্য সাধারণ মানুষ খাদ্যদ্রবের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছে। চাল, ডাল, নুন, তেল, শাক, সবজি, পেঁযাজ , মরিচ সবকিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। এমন কি সবজির ভরামৌশুম চলছে। এই মৌসুমেও সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্রমতার বাহিরে। ভরা শীতে এখনো আলু ৬০/৭০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা কেজি। যার প্রভাব পড়েছে কৃষি দিনমজুর শ্রেণির পরিবারে। দিনমজুর শ্রেণির পরিবার ও নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক পরিবার গুলো রোপা আমন মৌসুমে নিজেদের জমি চাষে দিনমজুর শ্রমিক নিয়োগ করতে এবারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারন কৃষি শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে রোপা আমন ধানের চারা উত্তোলন ও রোপন করার মত ক্ষমতা তাদের নেই। তাই তারা পরিবারের অন্য সকল সদস্য মিলে বীজতলার চারা রোপন ও জমিতে চারা রোপনের কাজ করছে। সূর্যের কারনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রোপা আমন ধানের চারা রোপনের ধুম পড়ে গেছে। কৃষিকাজে যাহা ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//