Print Date & Time : 21 September 2025 Sunday 4:03 am

লালমনিরহাটে কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ, নেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে : লালমনিরহাটে সড়কজনপদের কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ। নেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। যাহা সরকারি অপচয় ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা সদরের লালমনিরহাট- বুড়িমারী আন্তর্জাতিক মহাসড়কের ৩ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৬১৫ মিটার ড্রেন নির্মাণ করার কাজ চলমান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ডন এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান টি কাজ করছে। জেলা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তা জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামন। এই তিনটি দপ্তর আন্তর্জাতিক মহাসড়কের পাশে। এই অফিসের সামনের রাস্তায় বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এই সমস্যা সামাধানে পানি নিষ্কাশনে সড়ক ও জনপদ বিভাগ রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করছে। কিন্তু খুব আশ্চর্যের বিষয় ড্রেনের পানি নেমে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্বিঘœ না করে ড্রেন ও বক্সকালভার্ট নির্মাণ করেছে। ড্রেন ও বক্সকালভার্টের মুখ আবার বন্ধ। পানি নেমে কোথায় কিভাবে যাবে কারও জানা নেই। সাধারণত ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয় পানি নেমে যাওয়ার উৎসের প্রতিবন্ধকতা দুর করতে। সেটা এখানে করা হয়নি। সমস্যার সমাধান না রেখে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে এখানে ড্রেন নির্মাণ হওয়ায় স্থায়ীভাবে সমস্যা কয়েক গুণ বৃষ্টি পাবে। সৃষ্টি হবে চরম দুর্ভোগ। বক্স কালভাটের একমুখে জেলা প্রশাসকের ড্রেনের সংযোগ করা হয়েছে। কিন্তু বক্সকালভার্টের অন্য মুখটি উম্মুক্ত নয়। সেটা লালমনিরহাট সরকারি কলেজের মহিলা ছাত্রী নিবাসের প্রাচীর বরাবর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন অবস্থায় পানি নিষ্কাশন হবার নয়। আবার রাস্তার পাশের ড্রেনের মুখটির শেষমাথা আনছার ব্যাটালিয়ের দপ্তরের দ্বিতীয় গেটের পাশে গিয়ে শেষ করা হয়েছে। সেখানে ড্রেনটি উম্মুক্ত নয়। কারণ সেখানে শেষ করা হয়েছে ড্রেনের কাজ। বর্ষায় ড্রেনের পানি উপচে গিয়ে আনছার ব্যাটালিয়নের দপ্তরের অফিসচত্বরে কয়লা পানি জমে যেতে পারে। গেটে তো পানি জমবেই। রাস্তা সংস্কারের কাজেও যথাযথ নিয়মমানা হচ্ছে না। সংস্কারে কাজে নিম্নমানের নিমার্ণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।
কাজটি দেখার কেউ নেই। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ দপ্তর দুর্নীতির আঁকড়ায় পরিণিত হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৪ জন ফ্যাসিস সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া মাষ্টাররোলের কর্মচারি রয়েছে। তারা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন কি সরকারি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কোন পত্রিকায় যাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থের বিনিময়ে নাম না জানা আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
আইনজীবি মোঃ মঞ্জু সরকার জানান, সামান্য এই কাজ প্রায় দুই বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করছে। এতে তৈরি হয়েছে জনদুর্ভোগ। বর্ষামৌসুমে রাস্তার সংস্কার, ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তাটির প্রশস্ততা সংকোচিত হয়ে এসেছে। মাসের পর মাস রাস্তার ধারের ড্রেনের মাটি রাস্তার ওপর তুলে রাখা হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই সড়কটি মরণফাঁদে পরিণিত হয়েছে।
এদিকে একটি সূত্রের দাবি সড়ক ও জনপদের এই কাজটি মূলঠিকাদার করছে না। তারা লালমনিরহাটের জনৈক ব্যক্তিকে দিয়ে সাবঠিকাদারী দিয়ে করাচ্ছে। সরকারি কাজ কখনো ঠিকাদার অন্য কোন ঠিকাদারীপ্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিকে দিয়ে সাবঠিকাদার নিয়োগ করে করানো অন্যায় ও অবৈধ।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, ৩ কিলোমিটার রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য সরকার ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঠিকাদার কে বরাদ্দ দিয়েছে। বক্সকালভার্ট ও ড্রেনের জন্য ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ। ইতোমধ্যে ৬১৫ মিটার ড্রেনের বিপরীতে অর্ধেক কাজ হয়েছে। কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষের পথে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে তারা এই প্যাকেজের আর কাজ করবে না। তারা চুড়ান্ত বিলের আবেদন জানিয়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে বক্সকালভার্ট ও ড্রেন নির্মাণ সম্পর্কে বলেন, ভবিষ্যতে লালমনিরহাট পৌরসভা যখন ড্রেন করবে তখন পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা চুড়ান্ত করবে। তাহলে তো পানি নিষ্কাশনে এই ড্রেন ও কালভার্ট এই মূহুর্তে কোন কাজে আসবে না। তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।