পরীক্ষা না দিয়েও পাশ। ননদকে কৃতকার্য দেখানোর জন্য ভাবীর আবেদন
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন লালমনিরহাট জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের “পরিবার কল্যাণ সহকারী” পদে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় উপস্থিত না থেকেও সরকারি এই চাকরির পরীক্ষায় পাশের তালিকায় নাম প্রকাশ হয়েছে এক প্রার্থীর। সেই সৌভাগ্যবান প্রার্থীর নাম মুনাফা খাতুন রোল নম্বর ১২০৫১১৫৫ ।
স্থানীয় পর্যায়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোক মুখে চাউর রয়েছে প্রতিটি পদের বিপরীতে ২৫ লাখ অর্থ বিনিময় হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার নিকট খবর ছিল চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের রাতে এক বাগান বাড়িতে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে রেখে ছিল দুই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গভীর রাতে তাদের একজনের গাড়িতে জেলা শহরে এসেছিল পরীক্ষার্থীরা। শহর জুড়ে প্রচার হয়ে যায় প্রশ্নপত্র মনোনীত প্রার্থীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল তারা।
জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির জনবল বাছাই/নিয়োগ কমিটির সভাপতি মোঃ আবু জাফর, সিভিল ডাঃ সার্জন নিমূলেন্দু রায় ও পরিবার পরিকল্পার উপ পরিচালক হারুন অর রশিদ সহ তিন জন।
যে সৌভাগ্যবান প্রার্থী পরীক্ষা না দিয়েও পরীক্ষায় পাশ হয়েছেন তার ননদ (স্বামীর ছোট বোন) মোছাঃ জান্নাতুন ফেরদৌসী নামের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি লিখিত আবেদন করে জেলা প্রশাসককে জানান, তার ভাবী মুনাফা খাতুন পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন না।
এখানেই শেষ নয় পরীক্ষা না দিয়েই পাশ করা সেই মুনাফা খাতুন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে তার সিজারিয়ান অপারেশনের হয়েছিল। এ কারণে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাই তিনি লালমনিরহাটে গিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন নি। এরপরও পাশের তালিকায় নিজের নাম দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।
তিনি বলেছেন তার ননদ জান্নাতুন ফেরদৌসীর রোল নম্বর ১২০৫১১৫৬। আমার রোল নম্বর ১২০৫১১৫৫। দুটি রোল নম্বর পাশাপাশি হওয়ায় মুদ্রণ ভুল এমনটি হতে পারে। তাই তিনিও সঠিক ফলাফল প্রকাশের আবেদন জানান। তার নাম সংশোধন করে ননদকে কৃতকার্য দেখানো হোক। সে খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েছিল। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, এমন একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
একটি সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট সরকারি কলেজের কলা ভবনের তৃতীয় তলায় ৩১৮ নম্বর কক্ষে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন অভিযোগকারী জান্নাতুন ফেরদৌসী। একই পদে পরীক্ষার্থী ছিলেন মুনাফা খাতুন। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম একটি তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড পরে আদ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করে সেখানে নতুন করে ৫ জন প্রার্থীকে ফলাফলে পাশ দেখানো হয়েছে। এখন মোট ১৭৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংশোধিত তালিকাটি ২ নভেম্বর প্রকাশ হয়।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ২৫ লাখ টাকা রফাদফায় একটি চক্রকে প্রতিটি পদের বিপরীতে অর্থ দিতে হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নিয়োগ দেয়া হবে। পরিবার পরিকল্পা জেলার উপপরিচালক ড. হারুন অর রশিদ কে ফোন দিয়ে ফোন রিসিভ করেন।
দৈনিক দেশতথ্যের সাংবাদিক পরিচয় পেলে বলেন, আমি তার স্টাফ বলছি। বলেই ফোন কেটেদেন। আর ফোন রিসিভি করেননি।
লালমনিরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পা বিভাগে চলছে হরিলুটের খেলা। লোক দেখানো ট্রেন্ডার করে দুই বারে ১২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। শত কোটি টাকার দূর্নীতি দুদুক তদন্ত করেছে। এরপরও দূর্নীতি সামান্য হ্রাস পায়নি।
এই নিয়োগের কোটি কোটি টাকা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক হারুন অর রশিদ লেনদেন করেছেন বলে কয়েকজন প্রার্থী জানান। তাঁকে সরাসরি দিতে হয়নি। তার প্রতিনিধিকে দিতে হয়েছে। জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ যেন দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। চাকরি পরীক্ষায় বারবার ফলাফল মূল্যায়ন তারই প্রমান। তারা পরীক্ষা পুনরায় নেয়ার দাবি জানান।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডবোকেট মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, এখানে কোন রাজিনৈতিক ব্যক্তি নিয়োগ বোর্ডে নেই। তবে আমরা স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরিতে দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//নভেম্বর

Discussion about this post