লালমনিরহাটে পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক ওরফে সাকিবের গ্রামের বাড়িটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা রাজসিক সুরম্য অট্টোলিকা। এখন বাড়িটি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। পরিবারের সকলে বসবাস করছেন ঢাকায়।
১৫/১৬ বছর আগে পরিবারটির কিছুই ছিল না। বাবা আবু তাহের ছিলেন কৃষক। অন্যেও জমি বর্গাচাষ করতেন। ছিলেন ন্যাপ ভাষানী সমর্থিত কৃষক দলের একজন নেতা। গ্রামের মানুষ এক বাক্যে তাঁকে কৃষক নেতা হিসেবে চিনেন।
সোমবার দুপুরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়িতে একজন কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ নেই। স্থানীয় যুবক সাইদুর রহমানকে কেয়ার টেকার হিসেবে রেখে সকলেই ঢাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন।
১৫/১৬ বছরের ব্যবধানে পরিবারটি সুরম্য অট্টোলিকা তৈরি করেছে। প্রায় ২০/২২ বিঘা আবাদি কৃষি জমি কিনেছে। তার এক ছেলে আবু সাত্তার শাহীন ঢাকায় ১টি ঔষধ প্রস্ততের কারখানা দিয়ে ছিল। তার বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ২২/২৩ টি প্রতারণা ও নানা অপরাধে মামলা চলমান রয়েছে। তিন ছেলে মধ্যে সবার ছোট জঙ্গি সাকিব। তার দুই বড়ভাই ও এক বোন রয়েছে। দুই ভাই আবু সাঈদ ও আবু সাত্তার শাহীন। অন্য ভাই আবু সাঈদের ঢাকায় কোচিং ব্যবসা জড়িত।
জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ১৯৯৮ সালে স্থানীয় কুমড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করে। পরে সে আদিতমারী সরকারি ডিগ্রী কলেজ হতে ২০০০সালে এইচএসসি পাশ করে। পরে ঢাকার তিতুমির কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়।
পুলিশের ধারণা এই পরিবারটির সকলেই জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত। তাহেরের একমাত্র মেয়ে শিরিনা আক্তার কে স্থানীয় কুমড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে ছিল।
পরবর্তীতে পরিবারটি মেয়ে কে সেই স্বামীর সংসার হতে ডিভোর্স নিয়ে নেয়। তাঁকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে পুনরায় বিয়ে দেয়। গ্রামবাসীর ধারণা জঙ্গি সংগঠনের কোন সদস্যের সাথে পরিবারটি মেয়ে কেও পুনরায় বিয়ে দিয়েছে।
গ্রামে তাদের পরিবারের কেউ তেমান আসত না। মাঝেমাঝে ঐষধ কোম্পানির মালিক পরিচয় দেয়া ভাই আবু সাত্তার শাহীন আসত। জঙ্গি আবু সিদ্দিক ওরঢে সাকিব পালানোর দুই/তিন দিন আগে এক এক ভাইকে গ্রামবাসীরা দেখেছে।
গ্রামবাসীরা জানান, মাঝেমাঝে বিভিন্ন তরুণ- তরুণীকে এই বাড়িতে এসে কিছুদিন থেকে চলে যেতে দেখা যেত। তারা আসা যাওয়ার সময় কালো গ্যাসের হাইয়েস গাড়ি ব্যবহার করত। গ্রামের বাড়িটি এমন ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে কেউ প্রবেশের অনুমতি ছিলনা। নিরিবিলি পরিবেশে। বাড়ির সামনে সরাসরি গাড়ি প্রবেশের গেট রয়েছে।
গেটের ওয়ালটি রক্তের রংগে কালার করা। এটা সম্ভবত জঙ্গি সম্পৃক্ততার চিহ্নি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। কারণ এই বাড়িটি জঙ্গিদের গোপন আস্থানা বা আত্নগোপনের জায়গা হিসেবে ব্যবহার হয়ে ছিল। সে কারনে বাড়ির সামনে গেটের প্রাচীরটি রক্তের রংঙ্গে রাঙ্গানো ছিল।
এদিকে দুই জঙ্গি পলাতকের পর হতে দেশত্যাগে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইমেগ্রেশন রুটে রেড এ্যালাট জারি করা হয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় হাজিরা দিতে নেয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও ইমেগ্রেশন রুটে। দুই পলাতক জঙ্গির মধ্যে এক জঙ্গির বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী ইউনিয়নের কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ভেটেশ্বর গ্রামে।
রবিবার দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গন হতে পুলিশের চোখে- মুখে চিলি স্প্রে মেরে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়। দুই জঙ্গি হল- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ভেটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গির যাতে বুড়িমারী ইমেগ্রেশন রুট ব্যবহার করে বা সীমান্তে জোরাগুপ্ত ভাবে পালাতে না পারে সেই কারণে বুড়িমারী ইমেগ্রেশনে রেডএ্যালাট জারী করেছে। সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে সীমান্ত ্রগামের অধিবাসীদের মতে জেলার ২৮৫ কিলোমিটার সীমান্ত। এই সীমান্তের বেশকিছু পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। রয়েছে দূর্গম তর ও তিস্তা ও ধরলা নদী পথ। অতিথে অনেকেই এই সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে গিয়েছে খুব সহজে। দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে জঙ্গি সম্পৃক্ততার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। আদিত্যমারী নামুড়ি ও মহিষখোচা ব্লেডের প্রভাবশালী কয়েকটি পরিবার এই জঙ্গি সম্পৃক্ততার খবর সকলের মুখেমুখে।
এই উপজেলার দুই ইউপি চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকারপুত্র । তারা ২০০১ সালে জামাত বিএনপির ব্যানাওে ইউপি নির্বাচন করে জয়ী হয়। একজন দল ত্যাগ করে সরকারি দলে ভিড়ে অন্যজন্য জামাতের আমীর নির্বাচিত হয়। দুই চেয়ারম্যান রাতারাতি বড়লোক হয়ে যায়। তারা শতকোটি টাকার মালিক।
এবি//দৈনিক দেশত্য// নভেম্বর ২১,২০২২//

Discussion about this post