শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেছে। হাসপাতাল গুলোর বেডে ঠাঁই না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা চলছে।
লালমনিরহাটে আবারও মঙ্গার পদধ্বনি শুনাযাচ্ছে। অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে পেটের পীড়া ও শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রোগী আসছে।
জানা গেছে, গত দুইদিন ধরে লালমনিরহাটের আকাশে বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়া বইছে। আবহাওয়া পরিবর্তন জর্নিত কারনে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। লালমনিরহাটের কৃষি অর্থনীতিতে এবছর মন্দার ভাব। গ্রামের হাটবাজারে কৃষি পণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। কোন কোন কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ উঠছেনা। বেগুন দুই টাকা কেজি, আলু ২০ টাকা কেজি, পিঁয়াজ ৪০ কেজি। অথচ চড়া দামে আলু, পিঁয়াজ ও বেগুনের বীজ ও পুলি কিনে চাষি কে রোপন করতে হয়েছে। এখন উৎপাদনে এসে দাম না পেয়ে কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছে। যাহা দিনমজুর কৃষি শ্রমের বাজারে প্রভাব ফেলেছে। কৃষি শ্রমিকের হাতে কোন কাজ নেই। তাই রোজায় অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে দিনাতিপাত করতে গিয়ে পেটের পীড়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে গত এক বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে গেছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক তিন বছর, যা আগের বছর ছিল ৭২ দশমিক চার বছর। অন্যদিকে, মৃত্যুর হার বেড়ে প্রতি হাজারে পাঁচ দশমিক আট জন থেকে এখন ছয় দশমিক এক জন হয়েছে। গড় আয়ু বাড়াকে একটি দেশের উন্নয়নের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ দেশটির সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থের বিষয়টি এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। কিন্তু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় গত এক বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমে গেছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুর বড় তিনটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে হৃদরোগ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগের নাম। গড় আয়ু ও মৃত্যু হার বৃদ্ধির সাথে দেশের মানুষের আয় দায়ী। হঠাৎ করে উত্তরের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জেলা লালমনিরহাটে গ্রামীণ অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর পুনরায় মঙ্গার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে তৃণমূলের দরিদ্র মানুষ। গ্রামীণ জনপদে কৃষি শ্রমিকের দিনমজুরিতে দাম হঠাৎ কমে গেছে। দৈনিক দুই শত টাকা হাজিরায় নারী কৃষি শ্রমিক ও তিন শত টাকায় পুরুষ শ্রমিক হর হামেশায় পাওয়া যায়। আর্থিক দৈনদশায় দরিদ্র পরিবার গুলো বাসিপচা খাবার খেয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে গত ২/৩ দিন ধরে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট জর্নিত রোগী ও ডায়রিয়া কলেরার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২৫ জন শ্বাসকষ্ট ও পেটের পীড়া নিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। বিবিএসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১।
অন্যদিকে এক মাসের কম বয়সী নবজাতকের মৃত্যুহার হঠাৎ বেড়ে গেছে। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬। এখন সেটি বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।
শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমে গেছে বলে খবরে বলা হয়েছে। এসব পরিসংখ্যান বলছে দেশের মানুষের দুরাবস্থার কথা। দেশের সার্বিক উন্নয়নের ছোঁয়া সমান্তরাল ভাবে লালমনিরহাটে এসে লাগেনি। কোন অঞ্চলের যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন সেই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে। সেই চিত্র মতে লালমনিরহাটে কোন উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি। স্বাস্থ্যসেবার তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। গড়ে উঠেনি কোন ছোট-বড় কলকারখানা।
লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মেহেদী হাসান জানান, আবহাওয়া পরিবর্তন জর্নিত রোগের কারনে শ্বাসকষ্ট ও পেটের পীড়া রোগী বেড়ে গেছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে প্রায় ৫০ বছর পিছিয়ে আছে লালমনিরহাট জেলা।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post