সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: কৃষক শীতে ঠান্ডা উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপনের কাজে লেগে গেছে। গ্রামের মাঠে মাঠে বোরো ধানের চারা রোপনে ধুম পড়েছে লালমনিরহাটের গ্রামে। এবছর দিনের বেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সেচ সুবিধা পাচ্ছে কৃষক। স্থানীয় ৩০ মেঃওয়াড সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে জেলায় দিনের বেলায় বিদ্যুত চাহিদা শতভাগ পুরণ হচ্ছে। এই সৌর বিদ্যুতের সুবিধা নিয়ে জেলায় শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ সেচপাম্প বিদ্যুত ও সৌরশক্তি দিয়ে চালিত হচ্ছে। এবারে কৃষক কিছুটা হলেও সাশ্রয়ী মূল্যে বোরো ধানের মৌসুমে জমিতে পানি সেচ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে।
সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট । এ জেলা কৃষি শস্য ভান্ডারখ্যাত । জেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে বোরো ধানের চারা লাগানোর ধুম। হিমালয় হতে আসা উত্তরের হিমেল হাওয়া, হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার কৃষক ও কৃষিশ্রমিক গণ। নারী কৃষি শ্রমিকরা পিছিয়ে নেই। তারাও মাঠে মাঠে বোরো চারা তুলছে। কোথাও বা রোপনে কাজ করছে। রোপা বোরো মৌসুমে শুরু হয়েছে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে। চলবে আগামী মার্চ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। মার্চ মাসে বোরো চারা রোপন নমল হয়ে যায়। তবুও কৃষক তামাক, আলু, তিল, তিশি, সরিষা, গম ও সবজি জাতীয় প্রভূতি ফসল তুলে বোরো ধানের চারা রোপন করবে। এখন একযোগে ধানের চারা রোপনের মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষি শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে গেছে দ্বিগুন। এই সুযোগে কৃষি শ্রমিক গণ দিন মজুরিতে কাজে আগ্রহী নয়। তারা চুক্তি ভিত্তিক কৃষিতে আগ্রহী। তাতে তারা দলবদ্ধ হয়ে ভোর হতে সূর্যেও আলো থাকা পর্যন্ত বিরামহীন কাজ করছে। এতে দৈনিক আয় প্রায় এক হাজার হতে ১২ শত টাকা পর্যন্ত হচ্ছে।
জেলার আদিমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট সদরের প্রতিটি ফসলের মাঠে চলছে বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ। প্রচন্ড শীত আর ঘনকুয়াশায় বোরো বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে চারা রোপন করা পর্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে চাষি ও কৃষি শ্রমিক গণ। ইতোমধ্যে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে বোরো চারা রোপনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। নারী কৃষিক শ্রমিকরাও পিছিয়ে নেই। এখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জমি কাদা করে তৈরি করার পর ধানের চারা রোপনের কাজ চলছে। দিগন্তজোরা ফসলের মাঠে কোনো জমিতে চলছে জমি তৈরিতে হালচাষ, বীজতলায় চারা সঙগ্রহের কাজ। কোথাও চলছে কাদাহালের জমিতে ধানের চারা রোপনের কাজ। সব মিলিয়ে মাঠে মাঠে ধুম পড়েছে বোরো ধান লাগানোর।
মধ্যবিত্ত কৃষক রাফি উদ্ দ্বারাজ জানান, তার সারা বছর ব্যস্ত দিন কাটে। এখন চাষাবাদ আগের মত প্রকৃতি নির্ভর নয়। বরং তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। চাষাবাদে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখন কেউ গরুর হালে জমি চাষ করেনা। ট্রাক্ট্রর অথবা শ্যালোচালিত হালচাষের যন্ত্রদিয়ে জমি চাষ করে। এখানে ডিজেলের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া ধানের জমিতে এখন আগের মত ডিজেল চালিত নেই। এখন সেচ পাম্পা প্রায় বিদ্যুত চালিত অথবা সৌর বিদ্যূত চালিত। যেসব কৃষক সেচ পাম্প স্থাপনের লাইন্সেস করতে পারেনি তারা শুধুমাত্র ডিজেল চালিত পাম্পে সেচ দিচ্ছে। কৃষকদের বিদ্যুত চালিত সেচপাম্প স্থাপনের লাইন্সেস দিতে সহজ করার দাবি জানান। সেই সাথে লাইন্সেস পেতে বিদ্যুত বিভাগের ঘুষ ও দূর্নীতি হ্রাসের দাবি জানান।
এদিকে বৈশ্বয়িক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কৃষি উপকরনের দাম বাড়তি। নকল বীজ ও কীটনাশকে বাজার সয়লাভ। প্রতিহত করার দাবি জানান কৃষক।
লালমনিরহাট নেসকো সূত্রে জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জের তিস্তার চরে বেসরকারিখাতে স্থাপিত সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেছে আগষ্ট মাস হতে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি কালীগঞ্জে স্থাপিত উপকেন্দ্র সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুত সরবরাহ করছে। ফলে সকাল ১০ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সৌরচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর মাধ্যমে আপাতত জেলার সম্পূণ বিদ্যুতের চাহিদা মিটছে। দিনের বেলায় জেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত গ্রাহক পর্যায়ে পাচ্ছে। সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৩০ মেগাওয়াড বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ জানান, এ বছর জেলায় বোরো ধানের চারা রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ হয়েছে ৪৭ হাজার ৭ শত হেক্টর। কোন দূর্যোগে বা রোগ বালাইয়ে কৃষি বির্পযয়ে না পড়লে প্রতি হেক্টরে ধানের উৎপাদন হবে ৪.৩০ মেঃটন। এ বছর সেচ ব্যবস্তায় বিদ্যুত নির্ভর হওয়ায় ডিজেলের ওপর চাপ হ্রাস পাবে। ধান উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও সাশ্রয় পাবে কৃষক। বোরো ধান পুরোপরি সেচ নির্ভর চাষাবাদ।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//