সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: জেলায় ৫ মাস পর স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে । এতে করে বোরো ধানের ক্ষেতে বাড়তি পানি সেচ দিতে হচ্ছে না। এবারে ধান চাষে উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
লালমনিরহাট জেলায় এবছর ৪৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার বেশি ধান চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ ধারনা করছে।
উত্তরাঞ্চলে খনারবচন রয়েছে চৈত্রমাসের শুরুতে হলে বৃষ্টি কৃষকের ধান ক্ষেত হয় খুশি। ৭০-৮০’র দশকে উত্তরাঞ্চলে বোরো মৌসুমে ধানচাষ পুরোটাই ছিল প্রকৃতি নির্ভর। তখন কৃষক চাতক পাখির মত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। কখন বৃষ্টি হয়। জমি এক/দুই চাষ করে ফেলে রাখত। বৃষ্টি হলে কাঁদহাল করে রোপন করত বোরো ধানে চারা। তখন বছরে আউশ ও আমন এই দু’টি ফসল ফলাত কৃষক। এখন কৃষি সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। চাষ পদ্ধতিতে এসেছে বৈচিত্রতা। কৃষক টাইম ফ্রেমে ফেলে সময় ধরে চাষাবাদ শুরু ও শেষ করে। কৃষি এখন শুরু ভাগ্যের উপর, প্রকৃতির উপর নির্ভর নয়। এখন প্রযুক্তি ও চাষ পদ্ধতির উপর নির্ভর।
৫ মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক বোরো ধান চাষে প্রকৃতির উপর ভরসা করে বসে নেই। বোরো ধানের চারা রোপন শুরু হয়েছে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত যে সব ফসল রোপনের আওতায় পড়বে কৃষি বিভাগ সেই ফসলকে রবি ফসলের মধ্যে ফেলেছে। ১৫ মাসের পরের দিন হতে যে ফসল রোপন করা হবে সেটাকে কৃষক খরিচ- এক ও খরিপ- দুই ফসলের আওতায় ফেলবে। কৃষক পরিবার গুলো সরিষা, আলু, ভুট্টা, সবজি, তামাক, গাজর সহ নানা শীতের ফসল জমি হতে তুলে জমিতে সেচ দিয়ে বোরো ধানের চারা রোপন করেছে। ১০/১৫ দিনের মধ্যে ধানের রোপিত চারা গুলি থোকায় পরিণত হয়েছে। যন্ত্রচালিত সেচে যত পানি দেয়া হউক ধানের জমির রং একটু লাচে থাকে। ভূ গর্ভস্ত পানিতে ফসলের সারের চাহিদা পুরন হয়না। সেদিক দিয়ে প্রকৃতির বৃষ্টিতে বায়ুতে জমে থাকা ধুলাবালু সহ নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোনা ভেসে বেড়ায় সে কোনা গুলো বৃষ্টির সাথে জমিতে পড়ে। জমিতে খাদ্যপ্রাণ সৃস্টি হয়। প্রকৃতির বৃষ্টির পর পরেই ২৪ ঘন্টায় জমির ফসলের ক্ষেত্রের রং গাঢ় সবুজ কচিপাতার রং ধারণ করে। গত দুই দিনের বৃষ্টির পর দিগন্তজুড়া ফসলের ধানের ক্ষেত্র সবুজে সমারহ সৃষ্টি হয়েছে। রুক্ষ প্রকৃতি সেজেছে সবুজ। দোলার প্রকৃতি ফসলের ক্ষেত্রে জমে গেছে ৪/৬ ইঞ্চি পানি। আগামী এক- দেড় সপ্তাহ বোরো ধানের কোন জমিতে তেমন সেচ দিতে হবে না। যেসব জমি বালুময় সেই সব জমিতে কিছুটা সেচ দিতে হতে পারে।
গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি, ফেরুয়ারি ও মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে কোন বৃষ্টিপাতের হয়নি। খরা অনাবৃষ্টির কারণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কৃষি ক্ষেত্রে এমন ধারনা ছিল কৃষক ও কৃষির সাথে জড়িতদের কিন্তু প্রকৃতি সহায়তা করেছে। দুইদিন ধরে রাতে মোটামুটি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মিলিমিটার। এই বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে এক লাখ লিটার ডিজেল সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষককে বাড়তি অর্থ খরচ করে জ্বালানি কিনে সেচ দিতে হচ্ছে না। বোরো ধান চাষে রোপন কর্তন পর্যন্ত ১২০ হতে ১৫০ দিন সময় লাগে। ১২০ দিনের ফসলে গড় ফলন একটু কম হয়। তবে ধান কেটে অন্য ফসল চাষ করা যায়। ১৫০ দিনের ফসলে গড় উৎপাদন বেশী কিন্তু বছরে ২/৩ টি ফসলের বেমী চাষ করা যায় না। ১২০ দিনের ধান চাষকৃত জমিতে কৃষক বছরে ৪টি ফসল উৎপাদন করে থাকে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান জানান, মার্চ মাস প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃষ্টি ছিলনা। খরা ছিল। কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে পানি বেঁধে জমিকাঁদো করে বোর ধানের চারা রোপন করতে। কৃষক তাই করেছে। এখন দেশে কৃষিতে প্রায় ৯০ ভাগ প্রযুক্তি নির্ভর। কৃষক এখন আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে ধান রোপন সহ ফসল চাষ করে। তিনি আরো বলেন, দুই দিনের বৃষ্টির কারণে ধানের জমিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কৃষক জমিতে বাড়তি সেচ খরচ হ্রাস পেয়েছে। ফলে এবারে ধান চাষে উ’পাদন খরচ হ্রাস পাবে। আশা করা যাচ্ছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//