জাতীয় নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। ২৭ বছরেও তিন টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি লালমনিরহাটে বাস্তবায়ন হয়নি।
এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তিন টি বাস্তবায়ন হলে জেলার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে রাতারাতি। কোন বেকার সমস্যা থাকবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে ফিরে প্রাণ। আওয়ামীলীগের একটা ১৪ বছর ক্ষমতায় জেলায় অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটেছে চোখে দেখার মত কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে লালমনিরহাট ৫০ বছর।
রংপুর বিভাগীয় শহরের কোল ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট। বিভাগীয় শহরের উন্নয়নের কোন আঁচ জেলায় জেলায় এসে লাগেনি। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনী প্রচারে লালমনিহাটে এসে শেখ হাসিনা জেলা সদরের মহেন্দ্রনগরে এক জনসভায় ঘোষনা দেন। তাঁর মনোণিত এমপি কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে। ক্ষমতায় গেলে এই নির্বাচনী মঞ্চের পাশে মহেন্দ্রনগরে গড়ে তুলবেন ইপিজেড। আর লালমনিরহাট টু বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত রাস্তাটি হবে ওযানওয়ে সহ ফোর লেন কিন্তু ২৭ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দুইটি বাস্তাবায়ন হয়নি।
এদিকে ২০১৮ সালে রংপুরে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে তিস্তা পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন। সেই সাথে তিস্তা নদী খনন করে তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। বাস্তবে তিস্তামহা পরিকল্পনা ও তিস্তা নদীর পানি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আদ্যোতে কোন জোরালো পরিকল্পা চোখে পড়েনি বলে তিস্তা পাড়ের মানুষ মনে করে থাকে।
মহেন্দ্রনগরে ইপিজেড করার ঘোষনাপ্রধানমন্ত্রী নিজেই দিয়েছেন। সে বছর বাংলাদেশে দীর্ঘ খরায় পুড়ছিল। বৃষ্টির কোন দেখা নেই। রাষ্ট্রীয় ভাবে বৃষ্টির জন্য দোয়ার আয়োজন করার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটে সফরে আসেন। মহেন্দ্রনগরে করা মঞ্চে উঠার আগে মুষুল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যে তিনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী স্থানটিকে রহমতের স্থান বলেছিলেন। একই সাথে বৃষ্টিকে রহমতের বৃষ্টি বলেছিলেন। সেই স্থানের পাশে কয়েকশত একর খাস জমি রয়েছে। স্থানটি সড়ক ও জনপদের মহাসড়কের পাশেই ভৌগলিক অবস্থান। কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য ২৭ বছরেও এই ইপিজেড বাস্তবায়নের ফাইলের লাল ফিতা খুলেনি। ২০২০ সালের ৩ মে জেলা প্রশাসকের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফান্সে হয়। সেই দিনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইপিজেিড করার প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোঃ জাফরের কাছে জানতে চান। ডিসি মোঃ জাফর বর্তমানে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার। একই অবস্থা লালমনিরহাট টু বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহা সড়কটির। সরু ১৫-২০ ফিটের আঁকাবাঁকা ( সাপ চলার মত) রাস্তাটি ফোর লেন করার পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিদিন এই রাস্তাটি ব্যবহার করে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। দিন রাত্রি প্রতিমিনিটে ২২ চাকার একটি পণ্য বোঝাই ট্রাকা শহরের মিশনমোড় দিয়ে পাড় হয়। রাস্তার ক্যাপাসিটির বাহিরে ভারী যানবাহন চলাচল করায় দুর্ঘটনা এই রাস্তায় লেগেই থাকে। প্রতিদিন গড়ে একজনের মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটে।
বর্তমান সরকার টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ১টি সিভিল এ্যাভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, ১টি ৩০ মেগাওয়ার্ড সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র তিস্তার চরে নির্মাণ হয়েছে। লালমনিরহাট টু বুড়িমারী রেলওয়ে রুটটি পুনরায় সংস্কার হয়েছে। স্কুল কলেজের বিল্ডিং হয়েছে। কাকিনার মহিপুরে তিস্তা সেতু হয়েছে। তিস্তা নদীর উপর তিস্তা রেল সেতুর পাশেও সেতু হয়েছে। এসব নির্মাণে লালমনিরহাটের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টাতে পারেনি। বরং যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প রাস্তা খুলে যাওয়ায় লালমনিরহাট জেলা শহরের ব্যবসা বাণিজ্যের উপর গুরুত্ব কমে গেছে।
লালমনিরহাট জেলার অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করতে হলে খুবদ্রুত ইপিজেড নির্মাণ, বুড়িমারী স্থবন্দরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি ফোরলেন করতে হবে। রংপুর বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন করতে হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ও তিস্তা নদীর পানি চুক্তির বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা না হলে লালমনিরহাটের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখন সম্ভব নয়। এ জেলায় পুনরায় মঙ্গা ফিরে আসবে। বৈষয়িক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে বিশ্ব এখন। প্রায় ৬৪টি দেশে চলছে যুদ্ধবিগ্রহ। এই অবস্থায় পুনরায় উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটে মঙ্গা ফিরে এসেছে। গত দুই তিন বছর শহরে ভিক্ষুকের উপদ্রুপ ছিলনা বলেই চলে । এখন সেই ভিক্ষুকের উপদ্রুপ পুনরায় শুরু হয়েছে। সেই অর্থে সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র বা সাক্ষ্য বহন করে না। গড়ে ওঠেনি তেমন শিল্প-কারখানা। প্রসার ঘটেনি ব্যবসা-বাণিজ্যের। কর্মসংস্থান হয়নি বিশাল জনগোষ্ঠীর। বরং নদীভাঙনে প্রতিনিয়তই বাড়ছে গৃহহীন বেকারদের সংখ্যা। আলোর নিচে অন্ধকার-এই অপবাদ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি লালমনিরহাট। ১৪বছর লালমনিরহাট জেলার ৩টি আসন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক উন্নয়নে লালমনিরহাট বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়েছে সামান্য। কোথাও কোথাও সামান্য কিছু উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের গতি খুবই ধীর। এসব উন্নয়ন পরিকল্পায় জনপ্রতিনিধি গণ জনতার সুবিধার চেয়ে ব্যক্তি সুবিধাকে প্রাধাণ্য দিয়েছে। এমপিরা নিজেদেও ক্ষমতা জাহির করতে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠান গড়তে যেয়ে জেলা শহর কে কওে তুলেছে গুরুত্বহীন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//