লালমনিরহাট জেলায় বিএনপির নেতারা আওয়ামলীগের পদ পদবি দখলে নিয়ে রাজনীতির মাঠে স্বক্রিয়। এখন তারা সরকার দলের ছোট বড় নেতা। সবখানে বিএনপি জামাতে অবৈধ সিন্ডিকেট। হালুযা রুটিতে ভাগ বসিয়ে দিব্যি বুক ফুলে চলছে।
সরকারি দলে যোগ দিয়ে ৪ দলীয় সরকারের আমলে ও ১৩/১৪ সালের নানা নাশকতা, সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী সকল অপরাধী কর্মের বিচারাধীন মামলা গুলো নিষ্ক্রিয় বা উদ্ধার পেয়েছে। আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী গণ বিরোধী দলে থাকতে যাদের দ্বারা শোষিত ও নিপীড়িত হয়। দল সরকারে আসলে সেই সব বিএনপি নেতা আওয়ামীলীগে ভিড়ে যায়। তারাই শাসক শ্রেণি বনে গেছে। দল সরকারে থাকলেও নূন্যতম ভাগের পরিবর্তন হয়নি। তৃণমূলের পারিবারিক ভাবে বনিয়াদি নেতা-কর্মীরা বঞ্চিতই রয়ে গেছে।
সুুকৌশলে বিএনপি জামাত শিবির গুরুত্বপূণ্য পদ পদবি গ্রহন করে এখন আওয়ামী ঘরনায় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তারা পদ ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে রাজনীতির নীতিনিধারক বনে গেছেন। এখন নব্য হাইব্রিড নতুন মোড়কে বিএনপির আমলের সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু নেতৃত্বে দুই একজন কে অপকর্মেও সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে মাত্র। সরকারি চাকরি, ব্যবসা, বাণিজ্য তাদেও দখলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিওন, দপ্তরি, অফিস সহকারী পদে নিয়োগে বাণিজ্য, ঠিকাদারি, ব্যবসায়ি সংগঠন, শ্রমিক মালিক সংগঠন, মোটর মালিক সংগঠন সবখানে এখনো বিএনপি জামাতের লোক ডুকে পড়েছে। ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা হয়েছে বঞ্চিত। বঞ্চিত হতে হতে এখন অনেক কর্মী বিক্ষুব্ধ। তারা রাজনীতি হতে মুখফিরিয়ে নিয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা তাদের প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সংঘর্ষে হাইব্রিডদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাতে করে আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।
সেটাকে আবার পুঁজি করে জামাত, শিবির, বিএনপি চক্র গ্রাম গ্রামে অপপ্রচার কওে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। আওয়ামীলীগে ঢুকে সংগঠন বিরোধী কাজ করতে দেখা গেছে। সরকারকে বিপাকে ফেলাটাই তাদের উদ্দেশ্য। এটা জামাত, শিবির, বিএনপির সুচতুর চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামীলীগের রাজনীতি কে চিরতরে কুলুষিত করতেই এটা পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ ছিল। কিছুটা হলেও তারা মাঠ পর্যায়ে ও সরকারের উচুঁস্তওে সাফল্য পেয়েছে। লোভী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ধান্দাবাজ নেতাদেও মোটাদাগে অর্থের বিনিময়ে অনেক কে সাথে পেয়েছে। তৃণমূলের ত্যাগী নেতা সবুজ মন্ডল(৫৪) জানান, লালনিরহাটে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা আওয়ামীলীগের পদ পদবি বাগিয়ে নিয়েছে।
জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। তিনি উপজেলার বিএনপির সভাপতি ছিলেন। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিগত দিনে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। বিএনপি জামাত ক্ষমতায় থাকতে তার পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নেতা কর্মী নির্যাতন হতে হয়েছে। সেই মোহাম্মদ আলী সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হয়ে পুনরায় ইউপি চেয়ারম্যান।
একই অবস্থা মহিষখোচা ইউনিয়নে। সেখানে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী আ’লীগের প্রার্থী হয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। মহিষখোচায় ইউনিয়ন আপন দুই ভাই একজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অন্যজন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। পরিবারের স্বার্থে এখানে রাজনীতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একই উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নে ব্যবসায়ি সোহরাব হোসেন বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি। সেই আমলে ইউপি চেয়ারম্যান ছিল। এবার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় চেয়ারম্যান হয়। সারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়নটির বিএনপির সভাপতি মোঃ মনছুর আলী। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ইউপি নির্বাচনে হেরে যায়। তিনি পুরস্কার হিসেবে ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সদস্য নির্বাচিত হয়। সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বিএনপি নেতা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক অহেদ মাষ্টার এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিএনপির আমলে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারি চাকুরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
একই অনৈতিক কাজ কে বৈধ করতে এখন সরকারি দলের লোক বনে গেছে। তার সাথে বিএনপির প্রভাবশালীদের সু সম্পর্ক রয়েছে। একই অবস্থা রাজপুর ইউনিয়নে মোফাজ্জল হোসেন মোফা বিএনপির আমলে বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। আওয়ামীলীগ সরকারে এলে আ’লীগের প্রার্থী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান। দাপুটে নেতা।
কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়াম্যান প্রার্থী ফলাফল ড্র হয়। পুনরায় নির্বাচনে হেওে যায়। অথচ ঐ আসনের এমপি পরপর দুই বার হতে মন্ত্রী। তার লোকজন ও স্বজনরা বিএনপির হয়ে গোপনে কাজ করেছে। এক মন্ত্রী পুত্রের সাথে সখ্যতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পুরস্কার হিসেবে বিএনপির ঐ প্রার্থীকে উপনির্বাচনে বিজয়ী করে দেয়। এক মন্ত্রীর পুত্র ও মন্ত্রীর একান্ত সহকারি সচিব এই মহান অপকর্মটি করে বিএনপির আস্তাভাজন হয়ে উঠে। মোটা দাগের অর্থের বিনিময়ে বিএনপি, জামাত, শিবির, মৌলবাদী চক্র ও মাদক ব্যবসায়িরা মোটা দাগের অর্থরে বিনিময়ে সেল্টার পেয়েছে। জেলায় বিষয়টি ওপেনসিক্রেট। সরকারি চাকুরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতাও এই চক্রটি গোয়েন্দাদের কাছে রির্পোট আছে। প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ নাড়াতে সাহস পায়না।
এভাবেই নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগের কথিত নেতা কর্মীরা। যাদের বেশিরভাগ নেতা কর্মী বিএনপি, জামাত, শিবির রাজনীতি হতে আওয়ামীলীগে এসেছে। আদিতমারীর পলাশী ইউনিয়নে বীরমুক্তিযোদ্দা ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুখ্যাত রাজাকার পুত্র। যারা পিতার নাম সরকারের রাজাকারের তালিকায় রয়েছে। এই ইউনিয়নে রাজাকার পুত্র ও জামাত নেতার রক্তের স্বজন স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে নতুন করে বীরমুক্তিযোদ্দা হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়েছে। কার্যত জেলায় সরকার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করেছে জামাত, বিএনপি, শিবির ও মৌলবাদী চক্র। তারাই ঐতিহ্যবাহী এই আওয়ামীলীগের সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে জেলা শাসন করছে। সবখানে মোড়কের আড়াতে ফায়দা যাচ্ছে ঐ চক্রটির কাছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//অক্টোবর ২২,২০২২//

Discussion about this post