সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট:
লারমনিরহাট জেলা হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে সরকারী অর্থ হরিলুট। কোটি কোটি টাকা ভূয়া বিল ভাউচারে উত্তোলনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে জেলা হিসাব কর্মকর্তাকে বদলি করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সরকারী নার্সিং কলেজ, সমাজকল্যাণ দপ্তর, টিটিসি, যুবপ্রশিক্ষন কেন্দ্র, মহিলা অধিদপ্তর, প্রকল্প কর্মর্তার দপ্তর (পিআইও), এলজিইডি, গণপুর্ত, সড়ক ও জনপদ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের নামে ভূয়া বিল ভাইচারের মাধ্যমে শতকোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এমন কী কোভিট -১৯ এর সময় সরকারি সকল দপ্তর, স্কুল , কলেজ, প্রশিক্ষণ সেন্টার, নার্সিং কলেজ বন্ধ ছিল। সরকারী ভাবে বন্ধ অবস্থায় প্রশিক্ষণ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিলভাইচার দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এখানে রক্ষক ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছে। ভূয়া বিল ভাউচারের শতকরা ১০ হতে ২০ পার্সেন্ট জেলা হিসাব কর্মকর্তাকে কমিশন দিয়ে সরকারি নার্সিং কলেজের প্রায় বিভিন্ন সময় দুই কোটি টাকা ভূয়া বিলভাউচারে উত্তোলন করেছে। এসব অর্থ ২০১৯-২০২০ ও ২০২০- ২০২১ অর্থ বছরে হরিলুট করেছে। ২০২১ -২০২২ অর্থ বছরে এসে অবৈধ অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে কয়েকটি ঘটনা জনসম্মূখে চলে আসে। প্রতিটি ঘটনা ধামাচাপা দিতে কথাকথিত মিডিয়া কর্মীদের পিছনে লাখ লাখ টাকা বিলিয়েছে। তবুও কিছু মিডিয়া কর্মী সততা ও সামাজিক দায়বন্ধতা হতে রির্পোট আকারে দূর্নীতির খন্ড চিত্র প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। এতে দেখা যায় সরকারী নাসিং কলেজ কোভিন-১৯ সময় বন্ধ ছিল তবুও খোলা দেখিয়ে ভূয়া বিল ভাইচারে মাধ্যমে কলেজ কতৃপক্ষের সাথে মিলে কয়েক দফায় প্রায় দুই কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও সমাজ সেবার প্রকল্পের প্রায় ৯ কোটি টাকা ভূযা বিল ভাইচারে উত্তোলন করা হয়েছে। এই প্রকল্পটিকে পুষ্প প্রকল্প নামে পরিচিত। এটি একটি পুষ্প নামের এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে ছিল। একই অবস্থা জেলা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সেখানে ৫টি ট্রেডে নারীদের প্রশিক্ষণের নামে প্রতিটি উপজেলা হতে দুই কোটি টাকা করে ৫টি উপজেলা হতে ১০ কোটি টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে। পিআইও অফিসের মাধ্যমে কোভিড -১৯ সহায়তার নামে ভূয়া বিল ভাউচার করে হরিলুট করার হয়েছে। একই ভাবে গণপুর্ত ও এলজিইডির কয়েকটি প্রকল্পের সংস্কার দেখিয়ে বিল উত্তোলনের খরব সবার মুখে মুখে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের একশত ২৩ শতাংশ সরকারি জমি সদও উপজেলার মোস্তফিতে ব্যক্তি মালিকানা দেখিয়ে বিক্রি বায়না দলিল করা হয়। এই বায়নার একটি চেক জেলা হিসাব কর্মকর্তার দপ্তর হতে পাশ করা হয়। বিষয়টি নভেম্বর/২২ সদর উপজেলার ইউএনও ধরে ফেলে। তিনি বায়না রেজিষ্ট্রারির পরেও চেকটি হস্তান্তর করেনি। এ নিয়ে জমির চেক না পেয়ে ভূয়া জমির মালিক গণ উপজেলা চত্বরে চেকের দাবিতে মানববন্ধন করে। মিডিয়া কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে। সরকারী জমি ব্যক্তি মালিকানা দেখিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ১টি চক্র লোপাটের সকল আয়োজন চুড়ান্ত করে ছিল। এই চক্রের সাথে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার নাম শুনা যায়। জেলা হিসাব কর্মকর্তা সকল অনৈতিক হিসাবের চেক গুলো পাশ করিয়ে দেয়। অথচ তার দায়িত্ব ছিল সরকারী অর্থ অপচয় ও দূর্নীতি রোধে চুলছেঁড়া যাচাইবাচাই করে তবে হিসাবের চেক গুলো পাশ করা। এই ঘটনা গুলো জনসম্মুখে এলে মিডিয়া কর্মীরা হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে খোঁজ খবর করতে যায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেয়ে জেলা হিসাব কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান তরিঘড়ি করে ৪ ডিসেম্বর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। মোঃ মোজাফ্ফর রহমান নতুন কর্মকর্তা হিসেবে একই দিন কর্মস্থলে যোগদান করে। নতুন জেলা হিসাব কর্মকর্তা মোঃ মোজাফ্ফর রহমান জানান, দূর্নীতি, অনিয়ম সম্পর্কে এই মূহুর্তে কিছু বলতে পারব না। নতুন কর্মস্থলে এসেছি। এদিকে লালমনিরহাট জেলা হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। ২১ সালের ২৯ আগষ্ট জেলা হিসাব কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান লালমনিরহাটে যোগদানের পর হতে ১টি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। ভুক্তভোগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণ রংপুর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক ও মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কাছে অভিযোগ করেছে। জিপিএফ হিসাব নম্বর খোলা, বেতন নির্ধারণ, বকেয়া বিল, জিপিএ চূড়ান্ত বিল সহ সব কাজে ঘুষ দিতে হয়। গত বছরের জুন মাসে শিক্ষকদের বিভিন্ন বিল পাস করতে নানা অজুহাতে তিনি পুরো জেলা হতে উপজেলা হিসাব কর্মকর্তার মাধ্যমে উৎকোচ আদায় করেছে। চাকরি বহি ডিপিএড বেতন নির্ধারণ, জাতীয়করণকৃত শিক্ষক গেজেটভুক্ত, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের বিল পাশ করতে ঘুষ দিতে হয়। পেনশন ও আনুতোষিক বিল নিতেও ঘুষ দিতে হয়। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের ঠিকাদার গণ অভিযোগ করেছে যেকোন বিল নিতে গিয়ে হিসাব কর্মকর্তাকে ১০ পার্সেন্ট কমিশন দিতে হয়।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post