Print Date & Time : 9 June 2025 Monday 5:03 pm

লালমনিরহাট রেলওয়ে বর্বর গণ হত্যার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা লিটু ও টিটু

সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: লালমনিরহাট শহর রেলওয়ে কেন্দ্রীক বিভাগীয় শহর। এই শহর ভারত বর্ষের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ছিল। তাই ভারত বর্ষে আধুনিক শহর গুলোর অন্যতম শহর ছিল লালমনিরহাট। ভারত বর্ষের বিভক্তির ছোঁয়া এই শহরে প্রথম এসে লাগে। শহরটি দিনদিন গুরুত্ব হারাতে থাকে। পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের জন্ম হলে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায় লালমনিরহাট। রেলওয়ে কেন্দ্রীক শহরটিতে তাই পাকিস্তানী অবাঙ্গালীদের আদিখ্যতা বাড়তে থাকে। রেলওয়ের সব শ্রম প্রধান্য ও কর্মকর্তার পদ গুলো অবাঙ্গালিদের দখলে চলে যায়। বাঙ্গালিরা এখানে নিজ দেশে হয়ে পড়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাসে তাই হাজার হাজার বাঙ্গালির প্রাণ দিয়ে বিশুদ্ধ করতে হয়ে ছিল লালমনিরহাট কে। এমনি ইতিহাসের বর্বও হত্যাকান্ডের একটিচ চিত্র তুলে ধরবে নতুন প্রজম্মের কাছে। পুরো যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েক শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়ে ছিল সেই দিন। যারা আজ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যঙ্গ করেন তাদের টনক নড়তে পারে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিলের পর হত্য শুরু হওয়া ৯ মাসের হত্যা চিত্রের বর্ণনা শুনলে।

৭১’র ৪ এপ্রিল সকাল ১০ টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে রিকসা ষ্ট্যান্ডে নির্মম গণহতা চালায় পাকিস্তানী সেনা, রাজাকার, আলবদর, আলসামস্ ও অবাঙ্গালী বিহারীরা। এই দিন নরপশু ঘাতকরা ডিআরএম অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুরো ট্রেনযাত্রী, ষ্টেশন কেন্দ্রীক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি, ষ্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রী ও হকারদের ধরে নিয়ে আসে। তাদের স্টেশনের রিকসা ষ্ট্যান্ডে এখন যেখানে মসজিদের মার্কেট সেখানে   সারিবদ্ধভাবে দাঁড়  করিয়ে রাখে। তারপর  পাখি কে শিকারিরা যেভাবে গুলি করে ঠিক সেই ভাবে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। সেখানে প্রায় ৫/৬ শতাধিক নিরীহ মানষিকে হত্যা করে। ইতিসাহের সেই নিষ্ঠুর হত্যা কান্ডের কথা সাধারণ মানুষ ভুলতে বসেছে। এখনো রেলওয়ে প্রতিটি কোয়ার্টারে রেলওয়ের আবাসনের বাতাসে স্বজনদের কান্না শুনা যায়। এখনো অনেক স্বজন অপেক্সায় আছে স্বজন ফিরে আসার।  বাতাসে কান পাতলে স্বজনদের করুণ কান্না শুনাযায়।   পাকিস্তানী সেনা, অবাঙ্গালী, রাজাকার আলবদ, আলসামস্ মুসলীম লীগের নেতাদের নেতৃত্বে এই ইতিহাসের এই জঘন্যতম গণহত্যাটি সংগঠিত হয়। মায়ের সামনে সন্তানদের হত্যা করা হয়। সেই দিন প্রায় ৫/৬  শতাধীক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। রিক্সা ষ্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে পাখিরমত গুলি করে হত্যা করা হয়। লাশ গুলো টেঁনে হেচড়ে রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজারের কার্যালয় সংলগ্ন(ডিআরএম) অফিসের পাশে জলমগ্ন জঙ্গলে হাজামজা আর্বজনায় ভরা খালে ফেলে দেয়া হয়। সেখানে লাশের উপররে লাশ  রেখে মাটি চাপা  দিয়ে রাখা হয়। দেশ স্বাধীন হলে জায়গাটি গণকবর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।  বিষীকাময় এই ঘটনার কয়েকজন স্বাক্ষী এখনো  বেঁচে আছে। তাঁদের একজন রেলওয়ে কর্মচারীর সন্তান (বর্তমানে রং মিস্ত্রির পেশায় নিয়োজিত) মোঃ আকতার হোসেন(৫৬) জানায়,  অবাঙ্গালী কালুয়া গুন্ডা, রশিদ কসাই, নিয়াই চুঙ্গি মহির উদ্দিন, কুখ্যাত রাজাকার সহির, কুখ্যাত রাজাকার সুটকা গং এই হত্যা কান্ডের নেতৃত্ব দিয়ে ছিল। পাকিস্তানী এক মেজর সামুদ্দর হক, পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন হাসান শহীদ, মহিসখোচার মহির উদ্দিন, মোশারফ মাস্টার, মন্টু গাজী, চাঁন্দু কসাই, রহমান কসাই, রাজাকার আনোয়ার প্রমুখ  দাঁড়িয়ে  থেকে নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের মিশন শেষ করে। সেদিনের সেই নির্মম ঘটনার কথা স্বরণ হলে এখনো ভয়ে বুক কেঁপে উঠে। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার হয়নি। তাঁদের অনেকেই এখনো বাংলার মাটিতে বেঁচে আছে। ভোল্টপাল্টিয়ে ক্ষমতাসিনদের সাথে আঁতাত করে আস্ফলং দেখাচ্ছে। রাজাকারের সন্তান মন্ত্রীর এপিএস হয়েছে, কুখ্যাত রাজাকারের নাতি ছাত্রলীগের নেতা হয়ে উপজেলা নির্বাচন করেছে। কুখ্যাত রাজাকারের সন্তান এখন কথিত সংবাদ কর্মী হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধীতা করে  ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ, এরশাদের বোন জামাই, এরশাদের বোন জামাই মুক্তিযুদ্ধের সময় লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ছিলেন। এরশাদ সেই সময় ছিলেন পাকিস্তান আর্মি একজন সামান্য ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধে শুরু হওয়ার প্রস্ততি নেয়া সেই সময় লালমনিরহাট ছাত্রলীগের ৫ নেতা কর্মীকে এরশাদ সামরিক আইননে কারাদন্ড দিয়ে ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবুল হোসেন এমপি কুড়িগ্রামে মহকুমা কারাগার ভেঙ্গে তাদের মুক্ত করেন। পরে ঐ যুবকের একজন শাহাজাহান হক ভিকু  মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। আবুল হোসেন এমপির নির্বাচিত ৩ বারের এমপি ছিলেন। তিনি জীবনদশায় কখনো এরশাদের সাথে আপোষ করেননি। এরশাদ তাঁকে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করতে ব্ল্যাংক চেক দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি আপোষ করেনি। লালমনিরহাট বাসির জন্য দূঃখজনক হলেও সত্য, সেই স্বাধীনতা বিরোধী প্রধান শিক্ষক জহুরুল হকের শ্যালক জিএম কাদের এখন লামনিরহাটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। যে এরশাদ ছাত্রলীগ নেতাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য কারাগারে সামরিক বিচার করে কারাগাওে পাঠান সেই এরশাদ প্রসিডেন্ট হয়ে ছিলন। স্বাধীনতার বিরুদ্ধের আতœীয় জিএম কাদের এখনো এমপি। এই সত্য প্রকাশিত হওয়ায় হয়তো আইসিটি এ্যাক্টে মামলা হবে। তবুও নতুন প্রজন্মকে জানাতে লিখলাম। 

রং মিস্ত্রি আকতার হোসেন জানায়, তাঁকেও পাকসেনা ও তাঁদের দোষররা গুলি করে ছিল। গুলি এসে পায়ে লাগে। পানি পানি করলে মুখে প্রসাব করে দেয়। মৃতভেবে তাঁকেও মাটি চাপা দিতে খালে ফেলে দেয়া হয়। এক হরিজন ( সুইপার) তাঁকে বাঁচায়। বীরমুক্তিযোদ্ধা অবসর প্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মী আব্দুস ছালাম (৮০) জানায়, ৪ এপ্রিল গণহত্যায় শহীদদের পুর্নাঙ্গ নামের তালিকা স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও তৈরী করা হয়নি। ৮৩ জন শহীদের নাম রেলওয়ে কতৃপক্ষ রেলওয়ে শহীদ মিনার ( মুক্তমঞ্চে) শিলালিপিতে খোদাই করে রেখেছে। ৪ এপ্রিল হত্যাষজ্ঞের কথা ও অবদান কেউ স্বরণে রাখেনি। এই হত্যা কান্ডের পর হতে বেঁচে যাওয়া রেলওয়ে কর্মককর্তা কর্মচারীরা নিজ উদ্যোগে যে যেমনে পেরেছে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে। রেলওয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পৃথক অলিখিত ইউনিট ছিল। পেশা মানুষ গুলো মেধা, শ্রম ও রেলওয়ের টেলিযোগাযোগ ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে। পাকিস্তানী সেনাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এরশাদের পুরো পরিবার পাকিস্তানী সেনাদের পক্ষ নিয়ে ছিল। মুক্তিযোদ্ধা মেজবা উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন জানান, এরশাদের ভগ্নিপতি প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম পাকিস্তানী সেনাদের সহায়তা করেছে। তিনি পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্পে রসদ সাপ্লাই দিয়েছেন। বিমান ঘাঁটি, রেলওয়ে নাচ ঘর ( অফিসার ক্লাব) ও রেলওয়ে ট্রেনিং সেন্টারে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যে, সেনা ছাউনি গড়ে তুলে ছিল তাতে রসদ সরবরাহ করে ছিল। এই কুখ্যাত রাজাকার জহুরুল মাস্টারের এক সহযোগী সহকারি শিক্ষক দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রদের হাতে নিগৃত হওয়ার ভয়ে আতœহত্যা করেন। আর জহুরুল মাষ্টার লালমনিরহাট ছেড়ে অজানায় পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি কখনো লালমনিরহাটে ফিরে আসেনি। রেলওয়ে কর্মচারীদের জানায়, বীরমুক্তিযোদ্ধা লুটু ও টুটুর মা লতিফা সিষ্টার রেলওয়ে হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সকলে তাঁকে লতিফা সিষ্টার হিসাবে ডাকতেন। তিনি খ্রিষ্টধর্ম হতে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে ছিলেন। ১৯৭১’র ৪এপ্রিল রেলষ্টেশনের হত্যাযজ্ঞ শেষ করে সকাল ১১ টায় পাকিস্তানী সেনারা রেলওয়ে হাসপাতাল চত্বরে আসে। সেখানে তাঁর মায়ের সামনে কিশোর দু’ভাই লুটু ও টুটু কে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে গুলি করে হত্যা করে। কিশোর এই দুই ভাই সেই সময় লালমনিরহাট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেনীর ছাত্র ছিল। এই দুই কিশোর স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুতি নিতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছিল স্থানীয় ভাবে। তারা দুই জনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বা নেতা ছিলেন। সেই দিন জীবন বাঁচাতে মায়ের আঁচলের নিচে গিয়ে মুখ লুকিয়ে ছিল লুটু টুটু । মায়ের আঁচল হতে টেনে নিয়ে গুলি কওে হত্যা কওে দুই কিশোর সন্তানকে। নার্স মোছাঃ লতিয়া বেগম সেই দিনের পর হতে আর কখনো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি। একজন নব মুসলিম নারী হয়েও সন্তানদেও বাঁচাতে পারেনি। ইসলাম ধর্ম ভালবেসে তিনি খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু সেই মুসলিম ধর্মরক্ষকরা তাঁর সন্তানদের রক্ষা করেনি। কী মনে করে নার্স লতিফা বেগমকে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে। এই মা আমৃত্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। ৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনা, রাজাকার, আলবদর ও মুসলীমলীগের নেতারা ঘৃণ গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা চালিয়েছে। রেল অঙ্গনে এখনো সেই কথা গুলো মানুষের মুখে মুখে। এমন কী মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার অপরাধে রেলওয়ে কোয়াটারে বসবাসকারী রেলওয়ে কর্মচারীদের হত্যা করে ঘরের মেঝেতে লাশ মাটি চাপা দিয়ে রাখার ঘটনাও রেল অঙ্গনে রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে রেলওয়ের এই অবদান নতুন প্রজম্মের কাছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কী রেলওয়েতে কর্মরত থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নূন্যতম স্বীকৃতি পায়নি। অথচ রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা গোপনে পাকিস্তানীদের অবস্থান সম্পর্কে রেলওয়ে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে জানিয়ে দিত। সে ক্ষেত্রে তারা বিশেষ কোড ব্যবহার করতেন। তারা স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
১৯৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর তিস্তা রেলওয়ে সেতুর পাশে পাকিস্তানী সেনাদের সাথে সম্মূখ যুদ্ধে রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরাসরি পরিকল্পিত ভাবে অংশ গ্রহন করেন। সেইদিন পাকিস্তানী আর্মির মেজর এজাজ সহ প্রায় অর্ধশত আর্মিকে হত্যা কওে বীরমুক্তিযোদ্ধারা। সেই সমামূখ যুদ্ধের কয়েকজন বীরমুক্তিযোদ্ধা আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি। সেই দিনের যুদ্ধের পর তিস্তা সেতুর কাউনিয়া পাশে পাকিস্তানী সেনার কয়েকটি ক্যাম্পে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের নারীরা শুকনো মরিচের গুড়া নিয়ে হামলা করে। তারা পাকিস্তানী সেনাদের চোখে মরিচের গুড়া ছুড়ে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। সেই সব বীরত্বপূর্ণ নারীদের কথা নতুন প্রজন্ম জানে না। আমরা ভুলতে বসেছি।
আলোরুপামোড় বেহারী পট্টির কালুয়া গুন্ডা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বও হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দিয়ে ছিল। সেই কালুয়া গুন্ডা সৈয়দপুরে নাম পাল্টিয়ে অবস্থান করছে বলে একটি সূত্রে জানাগেছে। তাকে আটক করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা নির্মম ঘটনা বেড়িয়ে আসবে। কালীগঞ্জে এক সাংবাদিক পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তা করার খবর সকলের মুখে মুখে। সেই সাংবাদিকের মায়ের প্রথম স্বামীকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। এক মন্ত্রীপুত্র স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে আঁতাত করেছে। তার শ্বশুর জামাতে একজন প্রভাবশালী নেতা। তার পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধীতা করার প্রমাণ সাধারণ মানুসের কাছে রয়েছে। কু॥খ্যাত মন্টু কাজী রাজাকার কাজী তারা আত্নীয়। যদিও এখন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে আঁতাত করে চলে। শহরের ক্ষমতাধরদের উত্তাপের ছোঁয়ায় থাকে। সঠিক ইতিহাসের চর্চা করে ৫২ বছর পর এই গণহত্যায় দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হউক। সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় রেড ক্রিসেন্ট এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আলহাজ্ব আবুল হোসেন ও তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেক ডুকুমেন্ট (কাগজ পত্র) সংরক্ষণ কওে রেখেছেন। আবুল এমপির বড় সন্তান প্রফেসার মোঃ হামিদুল হক মন্টু বর্তমান সরকারের পিএসসি বোর্ডেও এক জন সম্মানিত সদস্য। তার লেখা কয়েকটি বইয়ে ৪ এপ্রিল গণ হত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতি কথায় অনেক তথ্য উপাত্ত উঠে এসেছে। সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবউল হোসেন কুড়িগ্রাম ট্রেজারী লুটকরে ৭টি গরুর গাড়িতে করে সোনা ও মূল্যবান সম্পদ ভারতে নিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের কোষাগারে জমা দেয়। যার স্বীকৃতি স্বরুপ স্বাধীনত বাংলা সরকার তাঁকে গেজেট আকারে পত্র দিয়ে সম্মানিত করে। এসব দলিল ইতিহাসের অমূল্যসম্পদ।

লেখক – অধ্যাপক ও সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শা