গোফরান পলাশ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কটি উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক কে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘু চাপের প্রভাবে সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়লে সদ্য নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কটি লন্ডভন্ড হতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। কেউ কেউ এটিকে মেয়রের বাণিজ্যিক প্রকল্প।স এবং কেউ কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের প্রকল্প বলে অভিহিত করতে শুরু করেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
প্রশাসন সূত্র জানায়, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন নির্মানাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়কটি খুবই দৃষ্টিকটু ভাবে ভেঙে পড়েছে। সড়কটির নির্মাণ কাজ খুবই নিম্নমানের হয়েছে। লোকাল বালু আর পাতলা সিসি ঢালাই এর মাধ্যমে সড়কটির কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্মাণে কোন ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি মর্মে জানায় সূত্রটি।
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্ব দিকে (ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্ব দিকে) তিনটি প্যাকেজে মোট দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিগত সরকারের সময় থাকাকালীন কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার। প্রথম দফায় ১৩০০ মিটার অংশের কাজ সম্পন্নের চেষ্টা করেন তিনি। বাকি ৭০০ মিটারের কাজ শুরু হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সৈকতে প্রচন্ড তান্ডব চালায়। এসময়ের মধ্যে নির্মাণাধীন সড়কটির দুই তৃতীয়াংশ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কুয়াকাটা পৌরসভার অপসারিত মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, প্রকল্পটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। কেবল সিসি কাজ চলমান রয়েছে। এরপর আরসিসির কাজ হওয়ার কথা। ঢেউয়ের ঝাপটা ঠেকাতে গাইড ওয়াল করার ডিজাইন রয়েছে। কাজের বিপরীতে কত টাকা বিল তোলা হয়েছে, তা প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়াজুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বারে কল করলে তিনি রিসিভ না করায় মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের বিল উত্তোলন সম্পর্কিত কোন তথ্য জানা যায়নি।
কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।
ইউএনও আরও বলেন, কুয়াকাটায় প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে এ প্রকল্পের কাজের বিল পরিশোধ করা হয়নি। এ বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।