Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 7:49 pm

শান্তি সমাবেশের পরও কুষ্টিয়ার গ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ


সংঘাত বন্ধে শান্তি সমাবেশের মাত্র ৯ দিন পর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের চরপাড়ায় আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার সকাল ৬ টার ঘটে যাওয়া এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। কয়েকটি ঘর-বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আহতরা হলেন গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন শেখের ছেলে লিটন শেখ (২৫), মুহাম্মদের ছেলে মামুন আলী (৩৫), আহম্মদ আলীর ছেলে আসলাম (৪৫), মৃত ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাশেম (৫০)। আহতদের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে গত ১১ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংঘাত বন্ধে চরপাড়ায় শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সমাবেশে উভয়পক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা আর কখনো সংঘর্ষ যাবে না।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ মে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুলাল মিস্ত্রির সমর্থক হুমায়ন মন্ডল (৪৪) খুন হন। নিহতের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম কুমারখালী থানায় ৩৬ জনের নামের একটি মামলা করেছিলেন। মামলা নম্বর ৯। এর পর গত সোমবার (১ আগষ্ট) হুমায়ন হত্যা মামলার ৪ নং আসামী ও আনসার আলী মেম্বরের সমর্থক সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শাহীন আলী থানায় ২৯ জনকে আসামী করে মামলা করেন। মামলা নম্বর ২। উক্ত মামলায় হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে আসামীপক্ষরা পলাতক ছিলেন।

সেলিম হত্যা মামলার আসামীরা জামিন নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে শনিবার সকালে গ্রামে ঢুকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে বাদী পক্ষ শাহীন আলীর লোকজন এলাকায় গেলে আসামীপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে তাদেরকে আক্রমন করে। এতে শাহীন আলী গ্রুপের মামুন, লিটন ও কাশেম গুরুতর আহত হন। এসময় আসামীপক্ষের আসলামও গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর শনিবার বেলা ১১ টার দিকে চরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষ শূণ্য গ্রাম। গ্রামের প্রায় সকল ঘরবাড়িতেই ভাংচুরের ক্ষত। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান করছে।

 
স্থানীয়রা জানান, চরপাড়া গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। ২০২০ সালে জমির আইল নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর আধিপত্য বিস্তারে  এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন দুলাল মিস্ত্রি। আর অন্য পক্ষেও নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য আনসার আলী মেম্বর।


ইউপি সদস্য আনসার আলী জানান, প্রতিপক্ষ জামিন নিয়ে গ্রামে ঢুকে দুলাল ও রেজাউলের নেতৃত্বে হামলা চালায়। হামলায় কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিটন শেখ, মামুন আলী ও আবুল কাশেমের স্বজনরা জানান, প্রতিপক্ষরা গ্রামে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে।

এতে লিটনের বুকের মধ্যে লোহার বল্লম ঢুকে গুরুতর আহত হয়। মামুন ও কাশেমের শরীরের একাধিক স্থানেও রক্তাক্ত জখম হয়েছে। সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপ বলেন, সেলিম হত্যা মামলার আসামীরা গ্রামে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৪ জন আহত হয়েছেন।

কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সেলিম হত্যা মামলার আসামীরা সকালে পুলিশকে না জানিয়ে বাড়িতে ওঠে। এর পর দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উভয় পক্ষ এর আগে এলাকায় শান্তি সমাবেশ করে আর সংঘাতে জড়াবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২০,২০২২//