শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে সারাদেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশ। উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট ছিল সারাদেশের পূজামণ্ডপ।
আজ রোববার মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। সিলেটের বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে একই সঙ্গে কুমারী পূজাও হবে।
গতকাল সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকালে শুরু হয় দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ।
এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি। অনেক মণ্ডপেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সংগীত, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটের পূজামণ্ডপগুলোও এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে সর্বত্র উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারি ও ভক্তের ভিড় ছিল। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষও। এতে মণ্ডপগুলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসবের মেলাঙ্গনে রূপ নেয়। আজ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে আজ প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। এ জন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসেবে মনোনীত করা হয়, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হবে। দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তার নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সিলেট মহানগর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা নিশ্চিতে নগরভবনে কন্ট্রোল রুম খুলেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২১ অক্টোবর) থেকে এ কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে, থাকবে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত। এ ৪ দিন সনাতন ধর্মালম্বীদের সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা দিতে এই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে।
নগরভবনের ১০৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন সিসিকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফুর রহমান।
হানিফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন- কন্ট্রোল রুমের নাম্বার হচ্ছে ০১৭১১৫৭০৭২৭। এই নাম্বারে ২৪ ঘণ্টা কল দিলে সেবা পাওয়া যাবে।
পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তাঘাটে রাখা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে এবং মহানগরের রাস্তায় অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত রেখে পথচারীদের চলাচল বিঘ্ন না ঘটাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার সপ্তমী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো সনাতন ধর্মালম্বীদের মূল পূজা। মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের বাদ্য, ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি আর পুরোহিতের মন্ত্র পাঠে দেবীর ষষ্ঠী তিথিতে বোধন পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
শনিবার সপ্তমীতে ভক্তরা উপবাস থেকে অঞ্জলি দেবেন দেবী দূর্গার চরণে। নানা বয়সী পূণ্যার্থী দুর্গা প্রতিমার সামনে এসে প্রণাম করছেন। কেউ কেউ দেবীর কাছে প্রকাশ করছেন মনেবাঞ্ছা। অঞ্জলি শেষে গ্রহণ করবেন চারণামৃত তারপর প্রসাদ।
‘সপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে পূজা হয় দেবীর। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। এরপর দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।’
এর আগে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ষষ্ঠীর সকালে হয়েছে কল্পারম্ভ, যার মধ্য দিয়ে শুভ শক্তির প্রত্যাশা করে শুরু হয় পূজা সন্ধ্যায় বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে সিলেট জেলার ৬১৭টি মন্ডপে বিল্ব বৃক্ষ বা বেল গাছের পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে আবাহন করে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসব।
শারদীয় দুর্গাপূজায় জনবান্ধব পুলিশিং সেবা নিশ্চিতকরণে সিলেট পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিজিটাল গাইড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে ।
স্মার্ট সিটিজেনদের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার ডিজিটাল গাইড ম্যাপ তৈরি করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন।
ডিজিটাল গাইড ম্যাপটিতে রয়েছে সিলেট জেলার সকল পূজা মণ্ডপের গুগল লোকেশন। রয়েছে জেলা পুলিশের অধিকৃত এলাকার সকল থানা ও তার অধীনস্থ বিটপুলিশের গুগল লোকেশন। প্রত্যেক থানার সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গুগল লোকেশনের পাশাপাশি রয়েছে থানার গুরুত্বপূর্ণ বাস, সিএনজি ও রেলস্টেশনের গুগল লোকেশন।
এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারমধ্যে সিলেট মহানগর ও জেলায় ৬১৭টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে। এতে সার্বজনীন পূজা ৫৬৯টি ও পারিবারিক পূজা ৪৮টি।
সিলেট মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত জানান- সিলেটের ৬১৭টি মণ্ডপের প্রতিনিধি দলের সাথে ইতিমধ্যে ২ দফা সভা হয়েছে। প্রতিটা পূজায় মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকল পূজা কমিটিকে সরকারের গাইডলাইন মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পূজা মণ্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন (সপ্তমী পূজা) পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় নি।
তিনি আরো বলেন- জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্গাপূজা উদযাপনে সকল সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের দুর্গাপূজা উদযাপনের মাধ্যমে শেষ হবে।
সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন- ‘যারা পূজা উদযাপনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। পূজার নিরাপত্তায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।’সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে পূণ্যভূমি সিলেটে চলমান শারদীয় দুর্গাপূজা সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রত্যয়ে জেলা পুলিশ সিলেট সজাগ ও সতর্ক অবস্থান রয়েছে বলেও জানান তিনি ।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন- নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা বাসানো হয়েছে। ‘সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার সাথে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় দুর্গাপূজা উযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//