Print Date & Time : 12 July 2025 Saturday 12:03 pm

শার্শায় পশু খামারিরা পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন

আর মাত্র এগারদিন পর অনুষ্ঠিত হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা উৎসবের মুল বিষয়বস্তুু হল পশু কোরবানি।

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাই যশোরের শার্শার বাণিজ্যিক খামারি ও পারিবারিক প্রান্তিক পশু লালন-পালনকারিরা কোরবানির বাজার ধরতে এখন শেষ মূহুর্তে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পশু মোটাতাজাকরণ ও স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। উপজেলায় চলতি বছর স্থানীয় চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুুত করা হয়েছে বলে পশু পালনকারিরা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়।

শার্শা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এ বছর উপজেলায় কোরবানি জন্য ৯ হাজারের অধিক পশু প্রস্তুুত করা হয়েছে। হিসাব চলমান থাকায় সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানা যায়।প্রস্তুুতকৃত কোরবানির পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি ছাড়াও ৬ হাজার ৩৫০ টি ছাগল এবং ১২৪টি ভেড়া রয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন বাণিজ্যিক খামারির খামারে প্রস্তুুত করা হয়েছে এক হাজার গরু। বাকি বিভিন্ন ধরনের পশু গুলো পারিবারিক ভাবে ২-১০ টি পর্যন্ত প্রান্তিক লালন-পালনকারিরা প্রস্তুুত করেছেন।চলতি বছর উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও পশু উদ্বৃত্ত হিসাবে থাকবে। যা বাইরের জেলাতে সরবরাহ করা যাবে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে পশু মোটাতাজাকরণে বাণিজ্যিক খামারি ও বাসাবাড়িতে প্রান্তিক লালন-পালনকারিদের সঠিক নিয়মে পশু পালনে স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন সময়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে পশু মোটাতাজাকরণে সুষম দানাদার খাবারের পাশাপাশি নিয়োমিত খাবার হিসেবে ঘাসের ব্যবহারের পরামর্শও উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

বাণিজ্যিক খামার ব্যবসায়ী বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামের এগ্রো ডেইরি ফার্মের মালিক আবু তাহের ভারত বলেন, এ বছর আমার ফার্মে ২০০টির ও বেশি গরু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭৫ টি গরু প্রস্তুুত করেছি। সবচেয়ে বড় যে ষাঁড় গরুটি টাইগার নামে তার ওজন আনুমানিক ২১ মণের উপরে। আর সর্বনিম্ন যে গরুটি রয়েছে তার ওজন হবে প্রায় ৬ মণ।দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ টাকায় এ সমস্ত গরু গুলো বিক্রির আশা রাখছি। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কেনার জন্য আসছে খামারে। এর মধ্যে কয়েকটা গরু বিক্রি করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত গরু বেচা কেনা হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গরু মোটাতাজাকরণে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যের দাম আর খামারের শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে এই কোরবানির ঈদে যদি আশানুরূপ দাম না পাওয়া যায় তাহলে খামারে লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে। তবে সীমান্ত এলাকার এ থানায় এখনও পর্যন্ত ভারতীয় গরু না আশায় আশা করা যাচ্ছে ভাল লাভ করা সম্ভব হবে।

শার্শা উপজেলার নৈহাটি গ্রামের খামার ব্যবসায়ি গাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছর করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণে দামে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছি। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির মধ্যেও আমার ফার্মে চলতি বছর ঈদ উপলক্ষে আশায় বুক বেঁধে ১৫টি গরু মোটাতাজাকরণ করেছি। ভাল দাম না পেলে পথে বসতে হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলার টেংরালী গ্রামের পশু খামারি শাহিন, মিন্টু ও বজলুর রহমান জানান, ঈদ সামনে রেখে বাড়িতে বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজাকরণ করেছি। গরু মোটাতাজাকরণে পরিশ্রম অনেক। ছোট শিশু সন্তানের মত যত্ন নিতে হয়। ভাল কিছুর আশায় বুক বেঁধে আছি। তাদের মত উপজেলার সব খামারি ও প্রান্তিক চাষি এ বছর তাদের লালন-পালনকৃত কোরবানির পশু নিয়ে ভাল কিছুর আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন।

শার্শা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, এ বছর উপজেলায় বাণিজ্যিক খামারি ও প্রান্তিক পশু লালন-পালনকারীরা মিলে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৭৩টি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু প্রস্তুুত রয়েছে।পশু প্রস্তুুতকারীদের নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। বাগআঁচড়া সাতমাইল ও নাভারণ পশু হাটে কোরবানির পশু বেচা কেনার সময়ে মেডিকেল টিম কাজ করবে। কোন পশু রোগাক্রান্ত হলে তা শনাক্তে কাজ করবে মেডিকেল টিম। একই সাথে হাটে থাকবে ক্যাশলেস ব্যবস্থা। ক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পশু কিনতে পারবেন বলে তিনি জানান।

খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২১ জুন ২০২৩