শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা(খুলনা): খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির শিংয়েরবাড়ি ঢিবিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননে উঠে এসেছে নবম হতে দ্বাদশ শতকের স্থাপত্য কাঠামো। ইতোমধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির ফলক, প্রতীমার ভগ্নাংশ, অলংকৃত ইট, কড়িসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতত্ত্ব বস্তু।
আনুমানিক ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮০ মিটার প্রস্থের ঢিবির দক্ষিণাংশ খননে একটি বর্গাকার স্থাপত্যকাঠামো স্পষ্ট। যেখানে একটি বর্গাকার কক্ষ উঠে এসেছে। কক্ষটিকে ঘিরে দেওয়াল দিয়ে বেষ্ঠিত একটি প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। মাত্র এক মাসের খননে মূল কাঠামোর কোণগুলোতে পাওয়া গেছে কোণিকভাবে প্রসারিত দেওয়াল। ধারণা করা হচ্ছে, আরো বেশি স্থানজুড়ে খনন কার্যক্রম প্রসারিত হলে এর স্বরুপ ও প্রকৃতি অনুমান সম্ভব হবে।
খননকাজে সংশ্লিষ্টরা জানান, উদ্ঘাটিত স্থাপত্যকাঠামোর উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব কোণের প্রদক্ষিণ পথের বাইরের দেওয়ালের সাথে মাটির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় খাদ্যবস্তু কালো রঙের চালের ডিপোজিট পাওয়া গেছে। এই চালের উপর গবেষণা করলে তৎকালীণ সময়ের ধানের প্রজাতি ও প্রতিবেশের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের সময়কাল খ্রি. নবম হতে দ্বাদশ শতক। তবে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিস্তারিত খননকাজ পরিচালনা ও প্রাপ্ত নমুনার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সম্ভব হলে স্থাপত্যকাঠামোসহ প্রত্নবস্তুর সময়কাল, সেখানে বসবাসকারীদের সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাওয়া সম্ভব। তবে খনন কার্যক্রমের প্রথম দিকে স্থাপত্যকাঠামো দেখে সেটি প্রাচীন বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন বলে ধারণা করা হলেও পর্যায়ক্রমে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু দেখে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে ধারণা।
এদিকে শনিবার বিকেলে এ স্থাপত্য কাঠামো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন, খুলনা-৬ (পাইকগাছা- কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু।
পরিদর্শন কালে এমপি বাবুর স্ত্রী পপি বেগম, নিসচার কেন্দ্রীয় সদস্য, পাইকগাছা উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সিনিয়র সদস্য ও কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুর রাজ্জাক রাজু, কপিলমুনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন মোল্যা , কপিলমুনি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ আজমল হোসেন বাবু, হাফিজুল মোড়ল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকাবাসী উপস্থিত হন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, পুরো এলাকার স্থাপনাগুলি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর পরবর্তী পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে এলাকাবাসী বিক্ষিপ্তভাবে (অপরিকল্পিত উপায়ে) এখানকার ইট উঠিয়ে আধুনিক স্থাপনাসমূহে এর ব্যবহার শুরু করে। এসব খননে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ইট, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, প্রাণীর হাঁড় উঠে আসে। সর্বশেষ প্রাচীনকালে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জরিপ শেষে শনাক্তকৃত উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যের ঢিবিগুলোর মধ্যে শিংয়ের বাড়ি রেজাকপুর কপিলমুনি ঢিবিটিকে নির্বাচন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২-১৬ মার্চ থেকে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ঢিবি (শিংয়ের বাড়িতে) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিকভাবে খননকার্যক্রম শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তিনি আরও জানান, তাদের টিমে ৪ জন কর্মকর্তা, ৫ জন বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারী, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ২ জন দক্ষ খনন শ্রমিক, বাগেরহাটের ৪ জন খনন শ্রমিক ও স্থানীয় ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব রতন চন্দ্র পন্ডিত’র সার্বিক নির্দেশনায় পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত হিসেবে রয়েছেন, বাগেরহাট যাদুঘরের কস্টোডিয়ান মো.যায়েদ। দীর্ঘ দিনের এই অঞ্চলে কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় খননকাজে পরামর্শ প্রদান করছেন, সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান। এছাড়া পরামর্শক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ২৩, ২০২২//

Discussion about this post