কূটনৈতিক প্রতিবেদক : গত ৭৫ বছর ধরে চলা ইসরায়েলে- ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধে মুসলিম-অমুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানালেও মধ্যপ্রাচ্যে আরব দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিন নিয়ে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এর বড় কারণ শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব।
সারা বিশ্বে মুসলিমরা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত- শিয়া ও সুন্নি। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরান-সৌদির জটিল সম্পর্ক ও টানাপোড়েনের মূল কারণ মতভেদ । শিয়া-সুন্নি মতাবলম্বীদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বে বলি হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। শিয়া-সুন্নি ৬৩২ সালে নবী হযরত মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর। সেসময় মুসলিমদের নেতৃত্ব কে দেবে সেখান থেকে সূত্রপাত হওয়া দ্বন্দ্ব এখনও এই বিভাজন টিকিয়ে রেখেছে।
সুন্নি কারা:বিশ্বজুড়ে যারা ইসলামে বিশ্বাসী তাদের বেশির ভাগই সুন্নি সম্প্রদায়ের। একটি হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম এই শাখার সঙ্গে যুক্ত।
বিশ্বের অনেক মুসলিম প্রধান দেশ সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এর ঐতিহ্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে সৌদিতে।
শিয়া কারা : ‘শিয়াত আলী’ বা ‘আলীর দল’ হিসেবে। আলী ছিলেন নবী মুহাম্মাদের জামাতা ও একাধারে ইসলামের ৪ খলিফার অন্যতম। শিয়ারা দাবি করে যে শুধু আলী ও তার বংশধরদের মুসলমানদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার ছিল।
ইরান, ইরাক, বাহরাইন, আজারবাইজান ও কিছু অনুমান অনুযায়ী ইয়েমেনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব : শিয়ারা সাধারণত সুন্নি শাসিত দেশগুলোতে সবচেয়ে দরিদ্র গোষ্ঠী। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব এই অঞ্চলে একটি শিয়া মৌলবাদী ইসলামী অ্যাজেন্ডা চালু করেছিল। উপসাগরীয় দেশগুলোর সুন্নি সরকারের জন্য এটি ছিল একটি চ্যালেঞ্জ।
বিপ্লবের পর ইরান দেশের বাইরের শিয়া ও মিলিশিয়াদেরও সহায়তার নীতি গ্রহণ করে। এটি মোকাবেলায় সুন্নি দেশগুলোও বিভিন্ন আন্দোলনে সমর্থন দিতে শুরু করে।
১৯৭৯ এ রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের পর ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ার শিয়াদের সমর্থন দিতে থাকে ইরান।
উদাহরণস্বরূপ লেবাননের গৃহযুদ্ধে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
কয়েক দশক ধরে ইরান ও সৌদি আরবের আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে যার পেছনে ধর্মীয় বিভাজনও একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। গাজায় চলমান সংঘাতেও তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পেছনে ইরান একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা ভেঙে দেওয়া।
হামাস একটি সুন্নি গোষ্ঠী হলেও কয়েক দশক ধরে ইরানের মিত্র। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হামাসকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেয় ইরান।
আবার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য গোষ্ঠী যারা হামাসকে সমর্থন করেছে ও এ যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা হল লেবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। তারা উভয়ই শিয়া গোষ্ঠী যারা তেহরানের মিত্র।

Discussion about this post