Print Date & Time : 3 May 2025 Saturday 1:42 am

শীতকালীন চর্মরোগের স্থায়ী সমাধান দেবে হোমিওপ্যাথি

শীতে রুক্ষতার সঙ্গী হয়ে আসে ত্বকের নানা সমস্যা। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়তে থাকে নানা রকম চর্মের সমস্যাও। বিশেষ করে যাঁরা সোরিয়াসিসের মতো কোনও সমস্যায় ভুগছেন বা ত্বক মারাত্মকরকম শুষ্ক, তাঁদের সমস্যা বাড়ে এই ঋতুতে। সোরিয়াসিস কিন্তু দ্রুত ছড়ায় এবং অযত্ন করলে খুব কষ্ট দেয়। তাই একেবারে প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত মাথার তালুতে, কনুই, হাঁটু বা পিঠে লাল চাকা চাকা দাগের মতো হয়ে চুলকানি দেখা দেয়, এছাড়াও শরীরের লোমযুক্ত স্থানে খুশকিসহ নানা ধরনের চর্মরোগ দেখাদেয়। সাবধান না হলে গোটা শরীরেই এগুলো ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ত্বক  কি ও কেন?

ত্বক বা চামড়া হলো শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। এর মূল কাজ হলো :

শীতকালীন চর্মরোগের মধ্যে প্রথমেই আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারি তাহল-

চুলকানি: চুলকানির সমস্যাকে সাধারণ মনে হলেও তা মোটেও সাধারণ নয়। অনেক কারণে এটি হতে পারে। কিছু কিছু দেখা যায় স্বাভাবিক কারণ। যেমন যাদের ত্বক খুব শুষ্ক, শীতকালে যখন ময়েশ্চার কমে যায়, তখন দেখা যায় চুলকাতে পারে। কারো যেমন ধরেন রক্তশূন্যতা আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো ডায়াবেটিস আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো কারো হরমোনে সমস্যা আছে, যেমন আমরা বলি থাইরয়েডের যদি কোনো তারতম্য হয়, বা কম বেশি হয়, দুটো থেকেই চুলকানি হতে পারে। এ ছাড়া সিস্টেমিক রোগ—যেমন অবসট্রাকটিভ জন্ডিস, লিভার সমস্যা; এসব থেকে ইচিং হতে পারে। কিডনিতে যাদের সমস্যা আছে, তাদেরও দেখা যায়, সারা গা চুলকাচ্ছে। এমনকি ম্যালিগন্যান্সি, রক্তের ক্যানসার সেখান থেকে সারা গায়ে ইচিং হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গরম পানিতে গোসল করে চুলকাচ্ছে। কারো কারো দেখা যায় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করে চুলকাচ্ছে। এটা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

একজিমা: শুষ্কতার কারণে ত্বক ফেটে যায়। আর্দ্রতার অভাবে ত্বকে এ সময় চুলকানি হতে পারে। সাধারণত পা বেশি আক্রান্ত হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি ভোগেন। অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে দীর্ঘ সময় গোসল করলে, অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করলে বা গোসলের পর শক্ত খসখসে তোয়ালে দিয়ে ঘষলে ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়বে।

খুশকি: শীতকালে খুশকি বা সেবোরিয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। মাথা ছাড়াও ভ্রু, চোখের পাতা, পিঠ, বুকের লোমযুক্ত অংশ, বগলসহ অন্যান্য অংশে খুশকি হতে পারে। এ সময় সাদা মরা ত্বক ওঠে, চুলকায়। খুশকি ছোঁয়াচে। এটি চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই খুশকি হলে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

সোরিয়াসিস: সোরিয়াসিসের তীব্রতা এ সময় বাড়তে পারে। হাঁটু, কনুই, মাথার ত্বক, হাত-পা বেশি আক্রান্ত হয়। মাছের আঁশের মতো চামড়া ওঠে। তবে চুলকানি না-ও থাকতে পারে। যাঁদের সোরিয়াসিস আছে, তাঁরা শীতের শুরুতেই সাবধান হোন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অ্যাটোপিক  ডার্মাটাইটিস: ২ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা এ সমস্যায় আক্রান্ত হয় বেশি। তবে বড়দেরও এটা হতে পারে। এসব শিশুর হাঁপানি ও অ্যালার্জি বংশগত এবং তাদের ত্বক এমনিতেই শুষ্ক। শীতে এই শুষ্কতা বেড়ে গিয়ে চুলকায়। এ ছাড়া সংক্রমণও হয়। উলের কাপড়ে অ্যালার্জি হতে পারে। এ সময় ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে।

কেরাটোসিস  পিলারিস: বাহু, ঊরুর বাইরের অংশ এবং পেটের পাশে লোমকূপের গোড়ায় ছোট দানার মতো দেখা দেয়। এটি একটি জিনগত রোগ, কিন্তু শীতকালে বেড়ে যায়।

ঔষধ ছাড়া এসকল সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার উপায়

শীতের দিনে যেহেতু পানি কম খাওয়া হয় এবং বাতাসও রুক্ষ হয়ে ওঠে ক্রমশ, তাই সমস্যার জটিলতা বাড়ে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা যায়-

পর্যাপ্তপরিমানে পানি পান করুন: শীতের দিনে পর্যাপ্ত পানি ও অন্যান্য তরল পান করা একান্ত জরুরি। পানির অভাবজনিত রুক্ষতা কিন্তু কোনো ময়েশ্চরাইজারেই দূর হবে না। তাছাড়া শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন বের করে দিতেও পানি আপনার প্রধান সহায় হতে পারে।

হালকা গরম পানিতে গোসল করুন: গরম পানিতে করতে আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু খুব গরম পানিতে আপনার ত্বকের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে। হালকা গরম পানিতে গোসল করুন, খুব কড়া সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। লুফা বা জালি দিয়ে খুব রগড়ে ত্বক পরিষ্কার করারও কোনো প্রয়োজন নেই। ত্বক ভেজা থাকতে থাকতেই ময়েশ্চরাইজার লাগান।

শরীরে সূর্যের আলো লাগান: সকাল ১০টার মধ্যে গায়ে অন্তত আধ ঘণ্টার জন্য রোদ লাগানো জরুরি! শরিরে ভিটামিন ডি স্তরে কোনো ঘাটতি না থাকলে ত্বক ভালো থাকবে।

ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করুন: গোসলের পর শরীর ভেজা থাকতে থাকতেই গ্লিসারিন, লোসন, ক্রিম বা তেল লাগাতে হবে। তবে সোরিয়াসিস থাকলে সুগন্ধি ক্রিমের দিকে ঝুঁকবেন না। একস্ট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল চলতে পারে। ব্যবহার করতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলিও। সুগন্ধি ক্রিম থেকেও কিন্তু সমস্যা বাড়ে।

নরম সুতির শীতপোশাক ব্যবহার করুন: উল বা পশমিনা থেকেও কিন্তু আপনার ত্বকের সমস্যা হতে পারে। তাই নরম সুতি বা সিল্কের পোশাক বাছুন। ডাবল লেয়ার দেওয়া হুডিজ বা জ্যাকেট পরতে পারেন। এমন কিছু পরবেন না যাতে ত্বকের অস্বস্তি বাড়ে।

খাওয়া দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখুন: খুব বেশি চিনি, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল, দুধ, লাল মাংস থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো। এগুলি শরীরের উত্তাপ বাড়ায়, তার থেকে আপনার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথিতে রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডা. হ্যানিমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে চর্মরোগসহ যেকোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা- ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিত্তিক, লক্ষণ সমষ্টিনির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে স্থায়ী চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

হোমিওপ্যাথি হলো বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ, সাশ্রয়ী জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি।

সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত উপসর্গগুলো দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

বিবিসি নিউজের ২০১৬ তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করে,

আবার ইদানীং অনেক হোমিও নামদারি চিকিৎসক বের হয়েছে, তারা চর্মরোগীদের পেটেন্ট. টনিক, মলম, ক্রিম দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাদের ডা. হ্যানিমান শংকর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকেন।

রোগীদের মনে রাখতে হবে— চর্মরোগ কোনো সাধারণ রোগ নয়,  তাই সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে একজন অভিজ্ঞ ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

হোমিওপ্যাথিস্ট এ কে এম আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, গবেষনা সহযোগী, আফজাল ভাইব্রেশন এন্ড ফ্রিকোয়েন্সি সিষ্টেম (দূরনিয়ন্ত্রিত পটেন্সি মেডিসিন প্রয়োগ পদ্ধতি), dr.anwarpatwary@gmail.com, যোগাযোগ: 01671460814(WhatsApp, imo, Viber, WeChat)