শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: সূর্যের দেখা নেই। শীতে কাঁপছে তিস্তা পাড়ের চরের মানুষ। খড়কুটো দিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে শরীর ঝলসে গিয়ে প্রাণহানীর ঘটনা বেড়ে চলছে। শীতবস্ত্র ও কম্বল সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার বুক চিড়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে তিস্তা নদী। খরস্রোতা ও ভাঙ্গন প্রবন এই নদীতে জেগেছে ছোট বড় শতাধিক চর। চর গুলোতে প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস রয়েছে। জেলায় ১২ লাখ লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে দুই লাখ তিস্তা চরে বসবাস করে আসছে। এছাড়াও সানিয়াজান, রত্না, ধরলা, গিদারিয়া ও বুড়িতিস্তার চরে কমপক্ষে এক লাখ লোকের জন বসতি রয়েছে। চরাঞ্চলে বর্ষাকালে নদীর পানি উঠে। যার কারণে চরাঞ্চলে বড়গাছ পালা জন্মায় না। চরে গাছ পালা কম থাকায় শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। আবার চরাঞ্চলে নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে থাকে। চরের মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস নদীতে মাছ ধরে ও গবাদিপশু পালন করে । এখন আর আগের মত নদী মাছ পাওয়া যায় না। শীতের প্রকটের কারণে নদীতে মাছ ধরা ও গবাদি পশু চরানোও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তাই দিনমজুর শ্রেণির আয় রোজগার নেই বললেই চলে। কয়েক বছর ধরে চরের বালুর জমিতে কৃষক চাষাবাদ করতে শুরু করেছে। চরে ফসল ফলাতে জমি চাষের খরচ কম হয়ে থাকে। সেচ নির্ভর চাষাবাদ হয়ে থাকে। ফলন নির্ভর করে ভাগ্যের উপর। কারণ দেখা যায়, ফলন ভাল হয়েছে। উঠতি ফসল ঘরে তোলার প্্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক, এমন সময় উজানি ঢ’লে সব ফসল ভেসে নিয়ে যায়। কৃষক হয়ে যায় নিঃস্ব রিক্ত। গতবছর আগষ্ট সেপ্টেম্বর মাসে তিস্তা পাড়ে কমপক্ষে ৮ বার পাহাড়ি উজানি ঢ’লের তোড়ে সবকিছু ভেসে নিয়ে যায়। চরের পরিবার গুলো এক কাপড়ে বাড়ি হতে বেড়িয়ে এসে উচুঁস্থানে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়ে ছিল। কোন ধরনের পোশাক তারা রক্ষা করতে পারেনি। বন্যার পর নতুন কোন ফসল চরাঞ্চলের মানুষ ঘরে তুলতে পারেনি। শীতের মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ায় চরে নানা ফসলের চাষ করছে। এই ফসল উঠতে আরও কমপক্ষে এক মাস সময় লাগবে। এখন চরে চরে চলছে মঙ্গার পদধ্বনি। দিনমজুর পরিবার গুলোর হাতে নগদ কোন অর্থ নেই। নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো দুই বেলা খাবার গোগার করতে ব্যস্ত। শীতের মৌসুমে শীতে শাকসবজির দাম চড়া। এখন আলু ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। অথচ বিগত শীত মৌসুমে আলু ১১ টাকা, বেগুন ৭ টাকা ও মুলা এক টাকা কেজিতেও কেউ কিনতো না। খাদ্যের পিছনে আয়ের সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে গরম কাপড় ও শীতের কম্বল কেনার মত অর্থ অবশিষ্ট থাকছেনা। জরুরি ভিত্তিতে শীতের কম্বল চরাঞ্চলের মানুষকে সহায়তা প্রয়োজন। এদিকে শীত নিবারণে নি¤œ আয়ের মানুষ খড়কুটোয় আগুন দিয়ে শরীরে তাপ নিয়ে থাকে। এই উত্তাপ নেয়ার সময় দুর্ঘটনায় শরীরে আগুন লাগার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। শীতের কম্বল থাকলে হয়তো এই আগুন তাপার প্রবনতা হ্রাস পেত। রংপুর মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কমপক্ষে ৫০ জন গত এক সপ্তাহে আগুন তাপাতে গিয়ে শরীর ঝলসে ফেলেছে, এমন রোগী হাসপতালে ভর্তি আছে। বেশকিছু রোগীর অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে, তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে ঢাকায় পেরণ করা হয়েছে।