পৌষের শেষ হতে আরো ২-৩ দিন বাকী। মাঘ মাস শুরুর আগেই সিলেটের শীতের প্রকোপ বেড়েছে অনেক। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে নেই সূর্যের দেখা, হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবি ও ছিন্নমুল মানুষেরা। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে । কুয়াশার কারণে বাসসহ অন্যান্য যানবাহনগুলো দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। রোদের অভাবে ধান শুকাতে পারছেন না মিল মালিকেরা। কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরা। দোকানপাট খুলছে দেরিতে। বেশি কষ্টে আছেন কর্মজীবি ও ছিন্নমুল মানুষেরা। শীতবস্ত্রের অভাবে বাড়ির বাহিরে বের হতে পারছেন না তারা। হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডার কারণে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষজন।
রিক্সা চালক দুলাল বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডা আর খুব বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সকালে বের হয়েছি এখন দুপুর ২ টা বাজে ১০০ টাকার কাম করছি। ঠান্ডায় মানুষ বের হচ্ছে না। তাই কাজ কমে গেছে। ইনকামও কম হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ী জায়েদ রহমান বলেন, কয়েক দিন থেকে খুব কুয়াশা আর ঠান্ডা পড়ায় বেচাকেনা কমে গেছে। আজ হাটবার বাজারে মানুষ খুবই কম। আবহাওয়া ভালো থাকলে বেচাকেনা একটু বেশি হয়। অটোবাইক চালক ফিজু বলেন, জীবিকার সন্ধানে অটো বাইক নিয়ে বের হয়েছি। ঘরে বাজার নেই। এজন্য বাইরে বের হয়েছি। খুব ঠান্ডা পড়েছে। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। তীব্র ঠান্ডার কারণে যাত্রীও সংকট। আগের মত এখন তেমন ইনকাম নেই।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী ওমর তালুকদার জানান, সিলেটের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আগামী দুইদিন শীত একটু বাড়বে।
এদিকে শীতের বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে রোগ-বালাই। হাসপাতালগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর বলেন, এই মৌসুমে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ঠান্ডাজনিত রোগ কিছুটা বেড়েছে। এই সময়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই সময়ে ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমান বাড়াতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। যতটা সম্ভব ঠান্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
এই হারকাপানো শীতে গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্যমআয়ের মানুষের ভিড় প্রতিদিন বাড়ছে। শীতে দিনমজুর, ছিন্নমূল ও বস্তির লোকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ফলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময়ে কাবু হয়ে পড়েন শ্রমজীবী মানুষের একটি অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। তাই বিত্তশালী মানুষদের উচিত এই শীতে তাদের সাহায্য করা, শীতবস্ত্র বিতরণ করা।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//