খুলনার পাইকগাছার মিনহাজ নদীর স্থানীয় বাজার সংলগ্ন একটি মাত্র গেট কয়রাসহ দু’উপজেলার অন্তত ৭০ টি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। দীর্ঘদিন যাবৎ নাব্যতা হ্রাসে নদীসহ গেটটির সামনের ক্যানেলটি সরু হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের প্রধান অন্তরায় হয়ে পড়েছে।
উপজেলার ১৫ কি:মি: দৈর্ঘের মিনহাজ নদীর মাত্র ২.৫২ একর জমি ইজারা দেওয়ায় ইজারাদারদের অপরিকল্পিত নেট-পাটা দিয়ে নদী শাসনে মাছ চাষে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে ইজাদার ও স্থানীয়দের একাংশের পানি উত্তোলনের দাবি ও অপর অংশের উত্তোলন বন্ধে আন্দোলনের মুখে চরম দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ সৃষ্ট সংকট সমাধানে শনিবার (১৬ এপ্রিল) পানি উন্নয়ন বোর্ডর উপসহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে মত বিনিময় করেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে চরম দূর্ভোগের স্বীকার এলাকাবাসীর ১৫ কি:মি: দৈর্ঘের মিনহাজ নদীর মাত্র ২.৫২ একর জমি ইজারা বন্ধে ও পুঃনখননের দাবির মুখে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারী বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, পাইকগাছার খড়িয়া মিনহাজ বাজার সংলগ্ন পানি সরবরাহের একটি মাত্র গেট লস্কর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডের ২০টি গ্রাম, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন চাঁদখালীর ৩২টি গ্রাম, গড়ইখালী ইউনিয়নের ১০টিসহ পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকাসহ অন্তত ৭০ গ্রামের পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম। তবে ১৫ কি:মি: দৈর্ঘের মিনাজ নদীর মাত্র ২.৫২ একর জমি ইজারা দেওয়ায় ইজারাদারদের অপরিকল্পিত নেট-পাটা দিয়ে নদী শাসনে মাছ চাষে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা।
জানাযায়, নদীটি মোট অংশের ২.৫২ একর জমি ৬ বছরের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় ২৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক হারে স্থানীয় বন্ধন সমিতিকে ইজারা প্রদান করেন। যার মেয়াদ আগামী দু’বছর বহাল রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।চলতি বছরের শুরুতেই গোটা উপজেলায় লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ রাখার ঘোষণায় মিনহাজ নদীর সøুইচ গেটটিও বন্ধ রাখা হয়। সমসাময়িক সময়ে উপজেলার প্রায় সমস্ত এলাকায় লবণ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ পুরোদমে শুরু হওয়ায় কথা উল্লেখ করে অন্যান্য এলাকার ন্যায় মিনহাজ নদীতে পানি উত্তোলন করতে চান ইজারাদার সহ স্থানীয়দের একাংশ।
স্থানীয় অহেদুজ্জামান খোকন সহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন গেটটি বন্ধ থাকায় নদীটি প্রায় শুকানোর উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে সøুইচ গেটটি দিয়ে লবন পানি উত্তোলন করা হলে নদী তীরবর্তী শত শত বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বর্ষা মৌসুমে এলাকার বৃষ্টির পানি সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় গজালিয়া থেকে চাঁদখালী অভিমুখে পীচের রাস্তায় পানি উঠে যায়। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, স্থানীয়রা রাস্তার উপর থেকে মাছও ধরে। মৌসুমের ৩ দিনের পানি সরতে সময় লাগে অন্তত ১৫ দিন। এসময় সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায় এলাকার ধান ও মাছ চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষত্রিগ্রস্থ হয়। ধ্বসে পড়ে বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি। নদী পাশের রাস্তা সংষ্কার হলেও পানির তোড়ে তা বারবার ভেঙ্গে যায়। দ্রুত পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় সেখানকার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নদীর ভরাটি অংশের খনন না করে উল্টো এখনই লবন পানি উত্তোলন করা হলে ঐ অঞ্চলের অন্তত এক লাখ বিশ হাজার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
তাই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে এলাকাবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসলেও সমাধান না হওয়া বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান এমপি, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবকে অবহিত করা হলেও কার্যত কোন স্থায়ী সমাধান আসেনি বলে জানান ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, কারা পানি উত্তোলন করবেন আর আর কারা করবেন না এটা দেখবেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থে এলাকাবাসীর কথা বিবেচনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সুষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ প্রতিনিধিকে জানান, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নদীর আশপাশের এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করেছেন তিনি। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এরপর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ পানি উত্তোলনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানান তিনি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ১৭,২০২২//