চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সিনিয়র সহকারি কমিশনার প্রাক্তন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিরীন আক্তারসহ ভূমি অফিসের পাঁচ কর্মকর্তা কর্মচারীকে তলব করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ কামাল।
শুনানীতে তলব করা অন্যান্যরা হলেন-চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ, কর্ণফুলীর প্রাক্তন সার্ভেয়ার (বর্তমানে এলএ শাখা) মো. ইউনুস মিয়া, কর্ণফুলী ভূমি অফিসের অফিস সহকারি (বর্তমানে নাজির) দেবাশীষ রুদ্র ও কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসের প্রাক্তন অফিস সহকারি (বর্তমানে বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের অফিস সহকারি) মাহবুবুল আলম।
জানা যায়, ভূমি অফিসের এই পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন কানাডা প্রবাসী তৌহিদুর রহমান। যার পক্ষে ‘এটি এজেন্সীর’ ম্যানেজার মোঃ আনোয়ার হোসেন গত বছরের ৩রা আগষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চট্টগ্রাম অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন।
দুদক চট্টগ্রাম-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী মো. আব্দুল মালেক ও সহকারি পরিচালক মো. ফয়সাল কাদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসানের নিকট প্রেরণ করেন। যার অভিযোগ বাছাই দরখাস্ত নং-৪৮০/২২।
এরপর ঢাকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার (দুদকের ২৬২৩ স্মারকে) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি প্রেরণ করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বিষয়টি ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ কামালের কাছে প্রেরণ করেন।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ১১টায় রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয়ে (কক্ষ নং-২৩৫) অভিযুক্ত সকলকে স্ব-শরীরে উপস্থিত হতে বলেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে শুনানী গ্রহণ করা হবে। একই দিন উপস্থিত ছিলেন এটি এজেন্সীর ম্যানেজার অভিযোগকারী মো. আনোয়ার হোসেন।
তাঁর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেদখলদারকে দখলদার ও প্রকৃত মালিককে দখল নাই বলে উল্লেখ করে উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ।
অন্যদিকে, সার্ভেয়ার মো. ইউনুস মিয়া প্রতিবেদন দিয়েছিলেন আবেদনকারীর অনুকূলে সব ঠিক আছে মর্মে। এ কাজে আরো জড়িত ছিলেন কর্ণফুলী ভূমি অফিসের নাজির দেবাশীষ রুদ্র ও তখনকার অফিস সহকারি মাহবুব আলম। পরে তৎকালীন সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিরীন আক্তার মুল খতিয়ানকে রাতারাতি পাল্টে দিয়েছিলেন। এমনকি খতিয়ান সৃজন করে অনলাইনে ইনপুট দেন। অথচ অফিসের কাগজ-কলম আর বালামে এ খতিয়ানের কোন অস্তিত্ব নেই বলে লিখিত অভিযোগকারী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘মোটা অংকের টাকা লেনদেনের বিনিময়ে প্রকৃত মালিকের ৩৮৭ ও ৫০৩ খতিয়ান বাতিল করে নতুন করে ৩৪৮০ নং খতিয়ান সৃজন চেষ্টা করছেন। এতে আমাদের ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে সাবেক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিরীন আক্তারকে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, এডিসির শুনানীতে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এডিসির শুনানীতে খতিয়ানের বিষয়ে যৌক্তিক কোন তথ্য দিতে পারেননি এসিল্যান্ড শিরীন আক্তার। এমনকি এডিসি ব্যাখ্যা চাইলেও এসিল্যান্ড সদত্তোর দিতে পারেননি। অনেকটা নাস্তনাবুদ হয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ কামাল জানান, দুদক মারফতে পাওয়া ভুক্তভোগির অভিযোগ শুনানিতে অভিযুক্ত সকলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাদের স্ব স্ব বক্তব্য জানিয়েছেন। তদন্তাধীন বিষয় বলে তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরবর্তী শুনানি শেষে হয়তো জানানো যাবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post