এনামুল হক কুষ্টিয়া: অবশেষে ভিসেরা রিপোর্টে ইবি শিক্ষার্থী নিহত সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকান্ডের প্রমান মিলেছে।
এতে নিহতের পরিবার ও ইবি শিক্ষার্থীদের দাবিই সত্যি হলো।
ইবি ক্যাম্পাসের পুকুরের পানিতে ভেসে উঠা উদ্ধারকৃত (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর লাশের ভিসেরা রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘হোমিসাইডাল ইন এ নেচার’ বা হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। যে কোন ভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। অর্থাৎ পানিতে ফেলানোর পূর্বেই তার
মৃত্যু হয়েছিলো।
ভিসেরা রিপোর্টের এমন মতামতের কথা উল্লেখ করে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনবলেন, ‘এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই আমাদের নজরে এসেছে, সেকারনে সব রকমের পানিতে ডোবা মৃত্যুই যেনো ময়না তদন্তের আওতায় আসে সেবিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে’।
গত ১৭ জুলাই বৃহষ্পতিবার বিকেলে পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সাজিদের মরদেহের ১৮ জুলাই সকাল ৯টায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল
হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়নাতদন্তের
সময়কাল থেকে ৩০ ঘণ্টা আগে সাজিদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট
চিকিৎসক। সেই হিসেবে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় বুধবার রাত সাড়ে তিনটার
দিকে। এরপর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনেকটাই নিশ্চিত হন স্বজনরা।
ইবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এতোদিন অপেক্ষায় ছিলেন মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে
পাওয়ার। ১৭ জুলাই বিকেলে ইবি ক্যাম্পাসের শাহ আজিজুর রহমান হলের পাশের একটি পুকুরে ভেসে ওঠা সাজিদের লাশ উদ্ধার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা পুলিশ। সাঁতার জানা সাজিদ পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটনাটি কোন ভাবেই
মেনে নিতে পারেনি সহপাঠীরা ও পরিবারের স্বজনরা। শুরু থেকেই সাজিদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে আসছিলো তারা। এতে
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইবি ক্যাম্পাস।
ইবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ এবং জিয়া হলের ১০৯ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী সাজিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার একটি মাদ্রাসার সুপারেনডেন্ট। তিনি মুঠোফোনে আলাপকালে
বলেন,‘শুরু থেকেই আমার ছেলের মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেছিলাম। আমার সাঁতার জানা ছেলে পানিতে ডুবে মারা যাবে কিভাবে ? আমার পরিবার এখন ছেলের শোকে বিধ্বস্ত বিপন্ন। আমি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সহ দৃষ্টান্তমূলক
বিচার চাই’।
ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের ভিসেরা রিপোর্টের কপি রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের হাতে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে এটিকে হত্যাকান্ডের প্রমান পাওয়ায় এখন সাজিদের পরিবার ও ইবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটি হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে তদন্ত শরু করা হবে।
ভিসেরা রিপোর্টের মতামত জেনেছেন উল্লেখ করে ইবি প্রক্টর সাহিনুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইবি প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি সাজিদ আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এমন সন্দেহের মতামত দিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
সেই সাথে ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী এটি সন্দেহাতীত হত্যাকান্ড প্রমানিত হয়েছে। এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ নিবেন’।